নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আজ পয়লা বৈশাখ। গোদাগাড়ী নববর্ষের আয়োজনে মুখরিত। ঘুড়ি উৎসব, লাঠিখেলা, নাগরদোলা, বৈশাখী মেলা ও গ্রামীণ ঐতিহ্যভিত্তিক নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করছে এলাকাবাসী।
উৎসবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াসা প্রকল্পের পরিচালক চিনা নাগরিক মি. জু। তিনি বলেন, “এই উৎসব অত্যন্ত প্রাণবন্ত। বাংলাদেশের মানুষ খুবই বন্ধুবৎসল ও অতিথিপরায়ণ।”
অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। যা পুরোপুরি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরনো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়।
এদিকে ১৬ বছর পর মুক্ত পরিবেশে এবারের পহেলা বৈশাখ পালন করবে বিএনপি। এজন্য বড় পরিসরে দিনটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ওইদিন বৈশাখী যাত্রা/র্যালি থেকে শুরু করে মেলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে। সারা দেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলায় এ কর্মসূচি পালিত হবে।
এদিকে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে বাঙালির প্রাণের এ উৎসব ঘিরে গোদাগাড়ীতে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে মেলা। সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও গতকাল রবিবার অর্থাৎ চৈত্রসংক্রান্তির দিন থেকেই মেলা ঘিরে বৈশাখী আমেজে মেতেছে গোদাগাড়ীবাসী।
মেলার আয়োজক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার উপজেলার নটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তিন দিন পর্যন্ত চলবে এসব মেলা।
বৈশাখ উপলক্ষে এসব মেলাজুড়ে বসছে নানা দোকানপাট। এর মধ্যে তাঁতের কাপড়, রঙিন পাখা, হস্তশিল্প, মাটির তৈজসপত্র, শিশুদের খেলনা, সাজ, কদমা আর বাহারি মিষ্টির দোকান অন্যতম। মেলা উপলক্ষে চলছে তাঁদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। অনেকে ইতিমধ্যেই মেলায় নিয়ে এসেছেন তাঁদের পণ্যসামগ্রী।
মেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে সুখেন পাল জানান, তাঁরা প্রত্যেকেই মেলার জন্য মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও তৈজসপত্র তৈরি করেছেন। চাহিদার কথা চিন্তা করে পুতুল, ব্যাংক, আম, কাঁঠাল, হরিণ, ঘোড়া, হাতি, মাছ, ময়ূর, সিংহসহ শিশুদের হরেক রকম খেলনা তৈরি করেছেন। গৃহস্থালি পণ্যের মধ্যে হাঁড়ি, পাতিল, ঢাকনা, ঝাঁজর, কলসসহ নানা তৈজসপত্র তৈরি করেছেন। এ ছাড়া তৈরি করেছেন ঘর সাজানোর জন্য ফুলদানি, টবসহ নানা জিনিসপত্র।
গোদাগাড়ী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, তাঁত, হস্ত, মৃৎশিল্পী, কুটির শিল্পসহ বৈশাখী উপলক্ষে অনেক লোকজন সম্পৃক্ত রয়েছে। তাঁদের বৈশাখজুড়ে থাকবে ব্যস্ততা।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, বৈশাখ মানেই বাঙালির প্রাণের উৎসব। নতুন বর্ষকে বরণের পাশাপাশি উৎসবকে পরিপূর্ণতা দেয় বৈশাখী মেলা। এসব পেশায় জড়িতরা অনেকটাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব শিল্পী ও কারিগরদের উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নইলে কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে বাঙালির আদি ঐতিহ্য।