মোঃ শাকিল রেজা সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ
দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি তিনটি গ্রুপে বিভক্ত। কিন্তু সেই গ্রুপিংয়ে এখন শীতল হাওয়া বইছে। সম্প্রতি ঢাকার গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে নিয়ে বৈঠকের পর কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে নেতকর্মীদের মাঝে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধানের শীষ প্রতিককে বিজয়ী করতে বাজছে ঐক্যের সুর। সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনজনের বক্তব্যে এমনই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, গত ৮ অক্টোবর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ-সদরের ও সদরের আংশিক) আসনের বিএনপির ধানের শীষ প্রতিকের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন জনকে ডাকা হয়েছিল দলটির গুলশান কার্যালয়ে। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তিন মনোনয়ন প্রত্যাশীর সাথে কথা বলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও বৈঠকে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা সদস্য মুর্শিদা জামান বেল্টু।
ওই বৈঠকে (৮ অক্টোবর) আগামী নির্বাচনে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সবাই সেই প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে দলীয় যেকোন কার্যক্রমে এক মঞ্চে সবাইকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠক থেকে কালীগঞ্জের এক সিনিয়র নেতাকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সবাইকে নিয়ে একমঞ্চে প্রোগ্রাম করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপরই গ্রুপিংয়ের বরফ গলতে শুরু করে। বিভিন্ন গণসংযোগ, কর্মীসভা ও সমাবেশে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান নেতাকর্মীরা। গত ৮ অক্টোবর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামীতে দলীয় কর্মসূচি একসাথে পালন করার নির্দেশ দিলেও এখনো তিনজনকে একমঞ্চে কোন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। তবে গত ১২ অক্টোবর শহরের থানা রোডস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বেল্টুর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের দাওয়াত দিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাইফুল ইসলামের কাছে যান আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মুর্শিদা জামান বেল্টু। এরপর দিন সকালে ফয়লা হাসপাতাল রোডে আরেকটি দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী হামিদুল ইসলামকে দাওয়াত দিতে যান তিনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতাকর্মীরা বিএনপির ঐক্য নিয়ে বিভিন্ন রকম পোস্ট দেন।
এরপর ২৩ অক্টোবর কালীগঞ্জে শহরের পৌর অডিটরিয়ামে যুবদলের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী হামিদুল ইসলাম। তাদের দুইজনকে মঞ্চের ১ম সারিতে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়াও ধানের শীষ প্রতিককে বিজয়ী করতে তিন মনোনয়ন প্রত্যাশী গ্রাম-গঞ্জে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কর্মীসভা, নারী সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও হাটসভার নামে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই কর্মসূচিতে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, বিএনপি বড় দল। বড় দলে মনোনয়নের প্রতিযোগিতা থাকবে। দল যদি কলাগাছকে মনোনয়ন দেয় আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাকেই বিজয়ী করবো। দলের সিদ্ধানের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। দল যদি ক্ষমতায় না যায়, আমার-আপনার কোন মূল্য নেই।
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী হামিদুল ইসলাম বলেছেন, দলের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কালীগঞ্জে বিএনপির তিনটি গ্রুপ বিদ্যমান। সবাই আলাদা আলাদা ভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে। একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, অপরপক্ষে আছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক হামিদুল ইসলাম ও অন্যদিকে সাবেক এমপি শহীদুজ্জামান বেল্টুর সহধর্মিনী এবং জেলা বিএনপির উপদেষ্টা সদস্য মুর্শিদা জামান বেল্টু। শহরে পৃথক স্থানে রয়েছে তিনটি দলীয় কার্যালয় রয়েছে। ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির ভোট বেশি। গ্রুপিং ভূলে সবাই যদি ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষ প্রতিকের পক্ষে কাজ করে তাহলে এই আসনে বিপুল ভোটে। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জয়লাভ করবে। তবে আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন যে পাবে তার পক্ষেই কাজ করবেন নেতাকর্মীরা।
কালীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির একাধিক নেতা সবুজদেশ নিউজকে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও সকল গ্রুপিং ভুলে একসাথে কাজ করেছে বিএনপির সকল নেতাকর্মীরা। মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারে। দল যাকে ধানের শীষ প্রতিক দিবে আমরা তাকে বিজয়ী করে দলকে এই আসন উপহার দিবো। দলের সিদ্ধান্তই সবাই মেনে ধানের শীষের বিজয়ের জন্য লড়বেন বলে জানান তারা।