নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন আজ। ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণকারী এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্মদিন উপলক্ষে দলীয় কোনো আনুষ্ঠানিকতা না করার কঠোর নির্দেশনা এবারও জারি করেছে বিএনপি। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে জন্মদিন পালনে বিরত থাকার যে সিদ্ধান্ত গত বছর নেওয়া হয়েছিল, তা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে চলতি বছরও।
দলীয় উচ্চপদস্থ সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলন, গ্রেফতার-নির্যাতনের পরিস্থিতি এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে জন্মদিন উদযাপনকে দলের নীতি-আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করেন তারেক রহমান। সেই কারণে তিনি সব পর্যায়ের নেতা–কর্মীদের এদিনে কোনো ধরনের আয়োজন, কেক কাটা, ব্যানার–ফেস্টুন বা শুভেচ্ছা সমাবেশ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
গত মঙ্গলবার দলীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই নির্দেশনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, দলের বর্তমান সংগ্রামমুখর অবস্থায় ব্যক্তিগত উদযাপন পরিহার করতে হবে। নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নেতা–কর্মীরা জানান, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই ধৈর্যশীল ও আত্মসংযমী সিদ্ধান্তকে তাঁরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। এমন সংকটময় সময়ে দল ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে নিজের জন্মদিনও নীরবে কাটানোর সিদ্ধান্ত নেতৃত্বের দায়িত্বশীলতার পরিচয়—এমন মত অনেকের।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপির বগুড়া জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে তারেক রহমানের আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক যাত্রা শুরু। মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালে তিনি গাবতলী থানা বিএনপির সদস্য হন।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশব্যাপী বিএনপির প্রচার কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি। তরুণ ভোটারদের মাঝে তার উপস্থিতি, বক্তৃতা ও সাংগঠনিক তৎপরতা বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
দল পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ সময় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তিনি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ সময় দূর থেকে দলের সব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ, নীতিগত দিকনির্দেশনা এবং আন্দোলন পরিচালনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
দলীয় নেতাদের ভাষ্য, বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারেক রহমান এখন কেন্দ্রীয় ভূমিকায় আছেন। দল পুনর্গঠন, বিদেশে কূটনৈতিক যোগাযোগ, কর্মসূচি নির্ধারণ—সব ক্ষেত্রেই তিনি সরাসরি নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
দলীয় ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তিনি “তারেক জিয়া” নামেই বেশি পরিচিত। তবে ঘনিষ্ঠজনদের কাছে তার ডাক নাম ‘পিনু’।
নেতা–কর্মীদের অনেকে মনে করেন, দলের ক্রান্তিকালে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রক্ষা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ ধরে রাখতে তারেক রহমানের জন্মদিন না পালনের সিদ্ধান্ত দলের শৃঙ্খলা ও ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।