মো. আতাউর রহমান মুকুল, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, গাইবান্ধা
টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। ইতোমধ্যে কাপাসিয়া ইউনিয়নের উত্তর লালচামার গ্রামে অন্তত ২০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আতঙ্কে আরও ৫০টির বেশি পরিবার ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। তীব্র ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও অন্তত ২০০টি বসতবাড়ি ও শতাধিক একর আবাদি জমি।
চরাঞ্চলের মানুষ এখন অসহায়। নৌকা ছাড়া চরের এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না। নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় আমনক্ষেত, পাট ও শাকসবজিসহ নানা ফসল ডুবে গেছে। চরের মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।
“এক মৌসুমে তিনবার ঘর সরাতে হয়”
লালচামার গ্রামের কছিম উদ্দিন বলেন, “প্রতিবছর নদী গিলে খায় ঘরবাড়ি। এক মৌসুমে তিন-চারবার ঘর সরাতে হয়। নদীভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী বাঁধ না হলে আমরা কোথাও টিকতে পারব না।”
“তিস্তার পনি বাড়লেই ভয় লাগে”
কাপাসিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, “গত রোববার থেকে পানি বাড়ায় লালচামার, ভাটী কাপাসিয়া, ভোরের পাখি গ্রামে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০টিরও বেশি পরিবার বসতবাড়ি হারিয়েছে। শতাধিক বিঘা জমিও নদীতে গেছে।”
“জিও ব্যাগে কাজ হবে না, চাই স্থায়ী বাঁধ”
কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মনজু মিয়া বলেন, “তিস্তার ভাঙন এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সরকারি কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। শুধু জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে যা অস্থায়ী সমাধান। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে চরের মানুষ একদিন পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে।”
“কৃষকের ক্ষতি ব্যাপক”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাশিদুল কবির জানান, “তিস্তার ভাঙনে কাপাসিয়া, শ্রীপুর, চন্ডিপুর ও হরিপুর ইউনিয়নের শতাধিক একর আমনক্ষেত নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে।”
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, “ভাঙন কবলিত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, “বর্তমানে ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে অস্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিষয়।”
নদী গিলে খাচ্ছে গ্রাম, ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব মানুষ
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে সুন্দরগঞ্জের পাঁচ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয় এবং হাজারো একর ফসলি জমি নদীতে হারিয়ে যায়। তাদের একটাই দাবি— “আমরা ত্রাণ চাই না, চাই বাঁচার নিশ্চয়তা।”