নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী দলীয় লোকজনের হামলায় আহত রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বিএনপির সদস্য সচিব জোবায়েদ হোসেন বিচার চান। বিএনপিকে ‘অস্থিতিশীল সংগঠন’ প্রমাণ করতে তার ওপর এমন হামলা দাবি করে জোবায়েদ বলেছেন, ‘দ্রুত এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তার হাতে ক্যানুলা লাগানো দেখা যায়। কপালে ছিল ব্যান্ডেজ। জোবায়েদ জানিয়েছেন, গত শুক্রবার তার ওপর হামলার পর থেকে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও মঙ্গলবারই তিনি হাসপাতাল থেকে এসেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিবরণ দেন জোবায়েদ হোসেন। তিনি জানান, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত শুক্রবার দুর্গাপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে একটি প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। সভা শুরুর আগে হঠাৎ সেখানে হাজির হন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ইশফা খায়রুল হক শিমুল। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জার্জিস হোসেন সোহেলের আমন্ত্রণে তিনি সভায় এসেছেন।
শিমুল চলে যাওয়ার পরে পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা হট্টগোল শুরু করেন। মোস্তফার শোরগোলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সোহেল সভাস্থল থেকে বেরিয়ে যান। এর ঠিক দুই মিনিটের মধ্যে তারা ১০-১৫ জনকে এনে পুণরায় সভাস্থলে প্রবেশ করে ভাঙচুুর চালাতে থাকেন। তারা মঞ্চে বসা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের লক্ষ্য করে চেয়ার ছুড়তে থাকেন। সোহেলের নেতৃত্বে রিদয়, মনিরুল, রেন্টু, মোস্তফা, মিলন আবদুল্লাহ, রাকিব, হেলাল, ফারুক, বাতেনসহ ১০-১৫ জন হাতুড়ি, লোহার রড নিয়ে হামলা করেন।
জোবায়েদ বলেন, ‘তারা কিল-ঘুষি মেরে আমার মাথায় আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। আমার কপাল বেয়ে রক্ত পড়তে থাকে। আমি মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর আমাকে ধরাধরি করে নীচতলায় নামিয়ে এনে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নিতে চাইলে হামলাকারীরা বাঁধা দেন। পরবর্তীতে নেতাকর্মীরা কোনরকমে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘কোন ইস্যু ছাড়াই সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলার উদ্দেশ্য হলো বিএনপিকে অস্থিতিশীল সংগঠন প্রমাণ করা। বিএনপি একটি বিশৃঙ্খল সংগঠন, এ সংগঠনে কোন চেন অব কমান্ড নেই, এ সংগঠনে যখন যাকে খুশি আঘাত করে পার পাওয়া যায়, কোনরূপ অপকর্মের জবাবদিহি করতে হয় না- এটি প্রমাণ করা। আমি এই হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি যেন আর কেউ বিএনপিকে কলঙ্কিত করার সাহস না পায়।’
জোবায়েদ জানান, হাসপাতালে থাকায় তিনি এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করতে পারেননি। তিনি শুনেছেন, জেলা বিএনপি এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা বিএনপি ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান আয়নাল, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হাসানুজ্জামান লাল্টু, জেলা কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান মন্টু, উপজেলার সদস্য রেজাউল করিম, হোসেন আলী শাহ, আক্তারুজ্জামান লাবুসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জার্জিস হোসেন সোহেল বলেন, ‘এই ব্যাপারে আমি টোটালি আননোন এবং আনসিন। আমি মিটিংয়ে যাওয়ার পর খালার অসুস্থতার খবর পেয়ে চলে আসি। আমি যদি সামান্যতম কিছু জানি, তাহলে যেন আল্লাহ আমাকে শাস্তি দেন। জোবায়েদ ভাইকে আমি আমার পরিবারের সদস্যই মনে করি। নিজের বড় ভাই নাই, তাকে বড় ভাইয়ের মতোই আমি শ্রদ্ধা করি। কোনদিন তার বিপক্ষে কথা বলিনি, বলতেও চাই না।’
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ‘কারা হামলা করেছে তার তদন্ত হচ্ছে। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বুধবার তারা তদন্ত করবে। বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দেবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’