
কলাপাড়া উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ রহিম শিকদার,,
স্বৈরাচার পতনের পরও রাজপথে সক্রিয় রয়েছে স্বৈরাচারের দোসররা। নতুন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পুরনো মুখগুলো আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে— এমন অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ প্রবণতা গণঅভ্যুত্থানের চেতনার জন্য হুমকিস্বরূপ।
গত ৫ আগস্টের ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলেও তাঁর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ঘনিষ্ঠদের কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের আশ্রয়ে পুরনো ক্ষমতাসীন ঘরানার একাধিক ব্যক্তি এখনো সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিভিন্ন নতুন দল ও সংগঠনের ব্যানারে স্বৈরাচারী ঘরানার বহু পুরনো মুখ আবারও রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। এতে গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহবাগ পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর যুব বিভাগের সভাপতি ইঞ্জি. মোঃ সালাউদ্দিন বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী উইংয়ের কেন্দ্রীয় প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম-সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ তিনি একই সঙ্গে দুই ভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা হিসেবে কাজ করছেন— যা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
এছাড়া ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ইঞ্জি. সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) দখলের চেষ্টা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু আইডিইবি সদস্যদের প্রতিরোধে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ নিজেকে এনসিপি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী উইংয়ের কেন্দ্রীয় আহবায়ক হিসেবে প্রস্তাব করেছেন। তিনি নিজেকে পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত বলে পরিচয় দেন। পাশাপাশি অতীতে বিভিন্ন শ্রমিক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনে যুক্ত ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন। তার যুক্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন সহায়তাকারী সংস্থা নামের সংগঠনটি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ন্ত্রিত বলে জানা গেছে।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলী উইং–এনসিপির কেন্দ্রীয় প্রস্তুতি কমিটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,ইঞ্জি. সালাউদ্দিন ও মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহসহ কয়েকজন ব্যক্তি সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভাজন ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের রাজনৈতিক আদর্শ এনসিপির মূল নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা চাইছে সংগঠন যেন শক্ত ভিত্তিতে দাঁড়াতে না পারে।
তারা আরও বলেন,আমরা একটি দুঃশাসনকে বিদায় দিয়েছি। এখন গণতন্ত্রকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করানোই চ্যালেঞ্জ। কোনো বিভ্রান্তি বা অপপ্রচার আমাদের সংগ্রামকে ব্যাহত করতে পারবে না।
গণআন্দোলনের অগ্রভাগের নেতারা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মন্তব্য করেছেন,যে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণ রক্ত দিয়েছে, সেই শাসনের সহযোগীরা যদি নতুন মুখোশে রাজনীতিতে ফিরে আসে, তবে গণতন্ত্র আবারও হুমকির মুখে পড়বে।
তারা আহ্বান জানিয়েছেন, গণআন্দোলনের চেতনা রক্ষায় স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনৈতিকভাবে বয়কট করতে এবং অতীতে দমননীতির সহযোগীদের জনগণের আদালতে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।