সংবাদাতা:মোঃ রুবেল মিয়া সংবাদাতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদ সাদ্দাম মিয়া (৩৭) নামের এক যুবককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
নিহত সাদ্দাম মিয়া শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল মস্তু মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ঘটনার বিবরণ:স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার গভীর রাতে হঠাৎ গুলির শব্দে কান্দিপাড়া এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। স্থানীয়রা ছুটে এসে সাদ্দাম মিয়াকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
পারিবারিক অভিযোগ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:নিহতের বাবা ও শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল মস্তু অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তার ছেলেকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত, এটাই কি আমার অপরাধ? যারা আমাকে টার্গেট করতে পারেনি, তারা আমার সন্তানকে টার্গেট করে মেরে ফেলল। রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিএনপি’র দুই গ্রুপের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের বলি হয়েছে তার ছেলে। তবে তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল হত্যাকারীদের শনাক্ত করার দাবি জানান।
সাদ্দামের স্ত্রী ফারজানা আক্তার জানান, “রাত ১টা পর্যন্ত সাদ্দাম বাসাতেই ছিলেন। আমি ঘুমানোর পর কেউ একজন এসে খবর দেয় যে তাকে গুলি করা হয়েছে। গিয়ে দেখি আমার স্বামী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন।” তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমার শ্বশুরের অনেক রাজনৈতিক শত্রু আছে। কিন্তু আমার স্বামীর কী দোষ ছিল? সন্ত্রাসীরা আমার দুই এতিম মেয়েশিশুর কথা একবারও ভাবল না।”
এলাকায় অস্থিরতা ও পূর্বের সংঘাত:স্থানীয়দের তথ্যমতে, সম্প্রতি লায়ন শাকিল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দিলীপের মধ্যে টাকা পয়সার ভাগাভাগি নিয়ে দ্ব দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধ হন, যাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এলাকাবাসীর ধারণা, এলাকায় সক্রিয় একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার এবং এসব ধারাবাহিক ঘটনার চূড়ান্ত পরিণতিই সাদ্দাম হত্যাকাণ্ড।
পুলিশের বক্তব্য:ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম জানান, “ঘটনার তদন্ত চলছে, তাই এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে রাতের ঘটনায় একজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি এবং আগের সংঘর্ষে আহত দুজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।”
বর্তমান পরিস্থিতি:একের পর এক সহিংস ঘটনায় কান্দিপাড়া ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সাদ্দামের মৃত্যুতে তার পরিবার ও রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।