জিল্লুর রহমান
দৈনিক বাংলাদেশ ক্রাইম সংবাদ
জেলা বিশেষ প্রতিনিধি শরীয়তপুর।
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে এক শিক্ষকের নিজস্ব জমি বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলে এক লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী ও ৮০ হাজার টাকা গ্রহণের এবং ভুক্তভোগী শিক্ষকের খরচে সরকারি খাল উদ্ধার করে খরচ হওয়া অর্থ পরিশোধ না করার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী লিয়াকত হোসেন সরকারি জাজিরা মোহর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক(সামাজিক বিজ্ঞান) হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি জয়নগর ইউনিয়নের উত্তর কেবলনগর কাজী কান্দি চটান জামে মসজিদ এলাকার হাজী ছয়ফুল বেপারীর ছেলে।
এবিষয়ে ওই ভুক্তভোগী শিক্ষক ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথকভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক লিয়াকত হোসেনের পৈত্রিক বাড়ীসহ পিতার ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ভূমি তারই চাচাতো ভাই রাজ্জাক বেপারী গং দীর্ঘদিন যাবৎ দখল করে রেখেছেন। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে শিক্ষক লিয়াকত হোসেন তার ন্যায্য পাওয়ানা সম্পত্তি বুঝে পেতে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয় বিষয়টির ব্যবস্থা নিতে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন জাজিরার ভূমি কর্মকর্তা মেহেদি হাসানকে।
পরবর্তিতে ভূমি কর্মকর্তা ভুক্তভোগী শিক্ষক লিয়াকত হোসেনকে ডেকে তার সমস্যা সমাধান করে দিবে বলে ১ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন। পরে ওই শিক্ষক কোন উপায়ন্তর না পেয়ে ভূমি কর্মকর্তা মেহেদী হাসানকে নগদ ৮০ হাজার টাকা দেন এবং ভূমি কর্মকর্তার কথা অনুযায়ী নালিশী ভূমির পাশে দখল হওয়া সরকারি খাল উদ্ধারের জন্য এক্সেভেটর মেশিন(মাটি কাটা ও উচ্ছেদ করার যন্ত্র) ভাড়া করে নিজ খরচে উদ্ধার কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। খাল উদ্ধারের কাজ শেষ হলে খরচ হওয়া অর্থ মিটিয়ে দিবে এবং ওই শিক্ষকের প্রাপ্য সম্পত্তি বুঝিয়ে দিবেন বলে ভূমি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান আশ্বস্ত করেছিলেন শিক্ষক লিয়াকত হোসেনকে। কিন্তু দখল হওয়া খাল উদ্ধার হওয়ার পর ভূমি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ওই শিক্ষকের পাওয়ানা জমি বুঝিয়ে দেয়া দুরে থাক তদন্তে পাওয়া প্রতিবেদনও দেননি এবং খাল উদ্ধারে খরচ হওয়া অর্থ প্রদান করেননি।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘‘দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ আমার চাচাত ভাই রাজ্জাক বেপারী ও তার লোকজন আমার বাবার ওয়ারিশে পাওয়া সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। এলাকার গণ্যমান্যরা কোন সমাধান করতে না পাড়ায় আমি জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হই। ভেবেছিলাম এবার হয়তো সঠিক সমাধানটি দ্রুত পাবো। কিন্তু এ্যাসিল্যান্ড আমার কাছে এক লাখ টাকা দাবী করেন। এছাড়াও আমার ওই এলাকায় একটি সরকারি খাল উদ্ধারের জন্য ভেকু মেশিন(মাটি কাটার যন্ত্র) ভাড়া করতে বলেন। আমি কোন উপায়ন্তর না পেয়ে তার কথামত নিজ খরচে ভেকু মেশিন ভাড়া নেই। এখন খাল উদ্ধার হওয়ার পর তিনি আমার জমির দখল বুঝিয়েও দিচ্ছেন না এবং খাল উদ্ধারে খরচ হওয়া টাকাও পরিশোধ করছেন না। এমনকি তদন্ত করে আমার জমি মেপে দেয়ার পর তার প্রতিবেদনও দিচ্ছেন না।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি জেনেছি ভূমি অফিসার মেহেদী হাসান আমার বিপক্ষের লোকদের সাথে বিপুল অর্থের বিনিময়ে যোগসাজশ করে তিনি আমার সাথে এমনটি করেছেন।’’
ভুক্তভোগী শিক্ষক লিয়াকত হোসেন এ সমস্যার দ্রুত সুষ্ঠু সমাধান চান।
ভূমি কর্মকর্তা মেহেদী হাসানকে নগদ টাকা দেয়ার সময় উপস্থিত থাকা নাসির মোল্লা বলেন, ‘‘লিয়াকত মাস্টারের জমি উদ্ধার করে দিবে বলে এ্যাসিল্যান্ড টাকা নিয়েছে। আমার হাত দিয়ে একবার ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপর লিয়াকতের থেকে আরও দুই ধাপে টাকা নিয়েছে। এসিল্যান্ড মোট ৮০ হাজার টাকা নিয়েছে।’’
জানতে চাইলে জাজিরা উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো: মেহেদী হাসান এবিষয়ে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এরপর তিনি বলতে থাকেন, ‘‘এসব মিথ্যে কথা, উনি যদি প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে উনার খবর আছে বলে দিয়েন। এবিষয়ে আপনাকে আমি কোন বক্তব্য দেবোনা। আমার সিনিয়র অফিস থেকে কিছু বললে সেক্ষেত্রে আমি আমার আত্মপক্ষ সমর্থন করব।’’ তিনি এসময় বলেন, ভালো মনে করে তার জমি মেপে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। এখন তিনি এসব বলে বেড়াচ্ছে। এসিল্যান্ড কি জিনিস উনি বুঝে নাই এবার বুঝবে। এখন দেখি তার জমি তিনি কিভাবে পায়। এসময় এই প্রতিবেদক মেহেদী হাসানকে বলেন, এটা তো সহিংস কথা হয়ে গেল, আপনি তার জমি কাগজপত্র অনুযায়ী মেপে দিয়েছেন তাহলে এমনটি কেন বলছেন? জবাবে ভূমি কর্মকর্তা বলেন, ‘সবকিছুই করার সুযোগ আছে।’’
ভুক্তভোগী শিক্ষকের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, ‘‘যেহেতু একটি লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’