
মোঃ শাকিল খান রাজুসিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার:
ভোলার মনপুরা উপজেলায় সরকারি অনুমোদন ছাড়াই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স-মিল। কোনোরূপ নিয়মনীতি মানা ছাড়াই এসব করাত কল প্রতিদিন কেটে ফেলছে বনজ, ফলদসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। দিন-রাত সবসময় সচল থাকা এসব স-মিল শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, আশপাশের বাড়ির বসবাসকারীদের জন্যও চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠেছে। বহু অভিযোগ সত্ত্বেও অবৈধ স-মিল মালিকদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে রয়েছে প্রায় ৫০টিরও বেশি স-মিল। অধিকাংশই লাইসেন্সবিহীনভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। সরকারের বিধি-বিধান থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। প্রশাসনের ‘দেখেও না দেখার’ মনোভাবের সুযোগে স-মিল মালিকরা নির্বিঘ্নে পরিচালনা করছে তাদের ব্যবসা। অনেক স-মিল সড়কের ঠিক পাশেই স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে হাজার হাজার কাটা গাছের গুঁড়ি পড়ে থাকে দীর্ঘদিন। এতে সড়কের বেশিরভাগ অংশ দখল হয়ে যাওয়ায় পথচারীদের মূল সড়কের মধ্যে দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। যার ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। বন ও পরিবেশ বিভাগের কার্যকর তদারকি না থাকায় রাস্তার ধারে, স্কুল, বাজার ও লোকালয়ের মধ্যেই অবাধে স্থাপিত হচ্ছে এসব স-মিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, ৩৭৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মনপুরা দ্বীপজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে এসব অবৈধ স-মিল। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা এবং দুর্বল মনিটরিংয়ের সুযোগে স-মিলগুলো ফুলেফেঁপে উঠেছে। ৩ নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় অবস্থিত শরিফ পাটোয়ারী স-মিলের মালিক শরিফ পাটোয়ারী দাবি করেন, “আমার স-মিলের ট্রেড লাইসেন্স আছে। আমরা কোনো অবৈধ গাছ কাটিনা। মনপুরায় বর্তমানে ৫০টির বেশি স-মিল রয়েছে এর মধ্যে শুধু হাজীরহাট বাজার এলাকায় চলমান রয়েছে দুইটি স-মিল। এছাড়া বাংলাবাজার সংলগ্ন সড়কের পাশেও রয়েছে আরও দুইটি। পাশাপাশি রামনেওয়াজ, চৌধুরী বাজার, চৌমুহনী, ফকিরহাট, ভূইয়ার হাট, আনন্দ বাজার, মাস্টার হাট, সিরাজগঞ্জ বাজার, কোড়ালিয়া বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজার, স্কুল-মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকাতেই গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ স-মিল। যদিও স-মিল স্থাপন বিধিতে স্পষ্ট বলা আছে সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ধর্মীয় স্থাপনা, জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ২০০ মিটারের মধ্যে স-মিল স্থাপন করা যাবে না। সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে স-মিল স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সকাল ৬টার আগে ও সন্ধ্যা ৬টার পর স-মিল চালানো যাবে না। যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত ফি প্রদান করে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু মনপুরায় এসব আইন-বিধিনিষেধের কোনোটিই মানা হচ্ছে না। বিধি উপেক্ষা করে একাংশ স-মিল মালিক রমরমা অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স-মিল মালিক জানান, লাইসেন্স ছাড়াই তো চলতেই পারছি। তাই লাইসেন্স করার দরকার কী! আবার লাইসেন্স করতে গেলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, অবৈধভাবে গাছ কাটা এবং অপরিকল্পিতভাবে স-মিল স্থাপন পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। তাই দ্রুত সব অবৈধ স-মিল অপসারণ, সঠিক তদারকি নিশ্চিত করা এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।