 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    
মোঃ বাবুল ময়মনসিংহ জেলা ব্যুরো প্রধান
তিতাস গ্যাসের অভিযানে উন্মোচিত ভয়াবহ চিত্র — জীবনের ঝুঁকিতে শিল্প, ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের রাজস্ব, বিপন্ন সাধারণ মানুষ
ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের রঘুরামপুর পূর্বপাড়া— একসময় ছিল নিরিবিলি সবুজ গ্রাম। ভোরের কুয়াশায় মাঠে ভেসে আসত মাটির গন্ধ, নদীর ঢেউয়ে মিশে থাকত মানুষের হাসি।
কিন্তু সেই দৃশ্যপট বদলে গেছে। এখন সেখানে ছড়িয়ে আছে ধোঁয়া, কালো কালি, আর অবৈধ গ্যাস সংযোগের আগুন।
যেখানে একসময় উঠত ধানগাছ, আজ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে চুন পোড়ানোর ভাটাগুলো— যেগুলোর তাপ শুধু মাটি নয়, পুড়িয়ে দিচ্ছে ন্যায়বোধকেও।
অভিযানে গ্রেফতার ১৫, জব্দ বিপুল পরিমাণ মালামাল — ভেঙে পড়ল অবৈধ সাম্রাজ্য
গতকাল দুপুরে তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একটি বিশেষ টিম ও ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে ১৫ জনকে আটক করা হয় এবং বিপুল পরিমাণ চুন উৎপাদন সামগ্রী, পাইপলাইন, জেনারেটর ও যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন তিতাস গ্যাসের উপ-প্রকৌশলী হামিদুর রহমান, যিনি বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
তাঁর সঙ্গে ছিলেন তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক হিলটন পাল, এবং একদল অভিজ্ঞ কর্মকর্তা।
পুরো অভিযানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শিব্বিরুল ইসলাম,
যেখানে মাঠ পর্যায়ে দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেন এসআই রিপন চন্দ্র সরকার।
তাদের সমন্বিত ও সাহসী পদক্ষেপে দীর্ঘদিন ধরে চলা একটি অবৈধ শিল্পচক্রের সমাপ্তি ঘটে।
দীর্ঘদিনের অবৈধ সাম্রাজ্য — অবশেষে ধরা পড়ল চুনের ব্যবসার আড়ালে গ্যাস চুরির কাহিনি
স্থানীয়দের ভাষায় , আমরা বহুদিন ধরে দেখতেছি, রাতে রাতে গ্যাসের পাইপ টেনে নিয়ে আসে। আগুন জ্বলে, চুন পোড়ানো চলে— অথচ কেউ কিছু বলে না
তদন্তে জানা যায়, স্থানীয় ব্যবসায়ী খোকন সরকারের মালিকানাধীন জমিতে এই কারখানাগুলো গড়ে তোলা হয়েছিল।
গ্যাস সংযোগের কোনো বৈধ অনুমতি ছিল না, তবু গোপনে লাইন টেনে প্রতিদিন চুন উৎপাদন করা হতো।
একজন বয়স্ক বাসিন্দা বলেন, রাতে জ্বলে আগুন, দিনে জ্বলে ভয়। জানি না কখন বিস্ফোরণ হবে, এত বড় কারখানা, অথচ কেউ থামায় না— এটা কি প্রশাসন জানত না
অবশেষে জনগণের অভিযোগ ও সংবাদমাধ্যমের তৎপরতায়, তিতাস কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ একযোগে অভিযান চালিয়ে
এই অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনে।
জনজীবনের ঝুঁকি ও রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি অভিযোগ রয়েছে, এই অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে সরকার বছরে হারাচ্ছিল লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।
তাছাড়া, এ ধরনের অবৈধ গ্যাস লাইন থেকে যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি ছিল মারাত্মকভাবে বিদ্যমান।
কারখানার ভেতরে কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না, গ্যাস পাইপলাইনগুলো ছিল অনিরাপদভাবে স্থাপিত।
একজন স্থানীয় বলেন,
একটা স্ফুলিঙ্গই যদি পড়ে, পুরো এলাকা উড়ে যাবে অথচ এরা দিনের পর দিন ব্যবসা চালাচ্ছিল।
তিতাস গ্যাসের এক কর্মকর্তা বলেন, এটা শুধু গ্যাস চুরি নয়, এটা রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ। দেশের সম্পদ ধ্বংসের সঙ্গে মানুষের জীবনও বিপন্ন করে তুলছে এই চক্র।
অভিযানের পরবর্তী পদক্ষেপ — আটককৃত ১৫ জন আদালতে, তদন্ত চলছে
কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মোঃ শিব্বিরুল ইসলাম জানান,
অভিযানে আটক ১৫ জনকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
জড়িত অন্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন,
আইন নিজের গতিতে চলবে, কেউ পার পাবে না। সরকারি সম্পদে হাত দিলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
বস্তুত, অবৈধ সম্পদে গড়া কোনো সাফল্যই টেকে না
আজ ময়মনসিংহবাসীর হৃদয়ে একটাই আহ্বান—
“সরকারি সম্পদে হাত দেওয়া মানে দেশের ভবিষ্যৎকে আগুনে ছুঁড়ে ফেলা
নদী, মাটি, গ্যাস— এগুলো জাতির সম্পদ,
এগুলো রক্ষা করা মানে নিজেদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করা।
কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর লোভ যেন গোটা সমাজের নিরাপত্তাকে বিপদে না ফেলে,
এটাই এখন সময়ের দাবি।
ময়মনসিংহবাসীর কণ্ঠে: এই অভিযানই হোক নতুন সূচনা
একজন কলেজ শিক্ষক বলেন, প্রশাসনের এমন অভিযান অব্যাহত থাকলে মানুষ আবার বিশ্বাস ফিরে পাবে।
আইনের শাসনই পারে সমাজকে সঠিক পথে রাখতে।
একজন নারী সমাজকর্মী বলেন, চুন পোড়ানোর নামে যে আগুন জ্বলছিল, তা এখন ন্যায়বিচারের আলো হয়ে উঠেছে।
ময়মনসিংহের বুক থেকে অবৈধতার আগুন নিভিয়ে দিতে হবে— এখনই
জনস্বার্থে প্রশাসনের এ ধরনের সাহসী অভিযান চলুক আরও জোরদারভাবে।
কারণ, রাষ্ট্রের সম্পদ সবার — আর লুটেরাদের কোনো দেশ নেই, কোনো হৃদয়ও নেই।