খন্দকার জলিল, স্টাফ রিপোর্টার
পটুয়াখালীর রাংগাবালী উপজেলায় আদালতের জন্য স্থায়ী ভবন না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ একটি টিনসেট দোচালা ঘরে চলছে বিচার কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে বিচারপ্রার্থী মানুষদের জন্য গলাচিপা আদালতে হাজিরা দেওয়া সহজ হলেও, সম্প্রতি রাংগাবালীতে সহকারী জজ আদালত ও ফৌজদারী আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় নানা সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয়রা। রাংগাবালী উপজেলার বাস্তব চিত্র রাংগাবালী একটি নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা। কয়েক বছর আগে গলাচিপা থেকে পৃথক হয়ে নতুন উপজেলা গঠিত হলেও এখনও তেমন উন্নয়ন হয়নি। বর্তমানে এ উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়ন রয়েছে—রাংগাবালী সদর, ছোট বাইশদিয়া, বড় বাইশদিয়া, চর মোন্তাজ, চালিতাবুনিয়া ও মৌডুবী। উপজেলাটিতে নেই পৌরসভা, উন্নত রাস্তা-ঘাট কিংবা নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফায়ার সার্ভিস, পশু হাসপাতাল, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, মানসম্মত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার উপযুক্ত আবাসিক ভবনও নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থার কারণে অনেক মানুষই গলাচিপা পৌরসভায় বসবাস ও ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে যুক্ত। আদালতের সংকট কয়েক মাস আগে রাংগাবালীতে সহকারী জজ আদালতের দেওয়ানি মামলার কার্যক্রম চালু হয়। তবে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মামলার নথিপত্র নিরাপদে রাখা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। দেওয়ানি মামলায় আসামী না থাকায় আপাতত বড় কোনো ঝুঁকি নেই। কিন্তু সম্প্রতি এখানেই ফৌজদারী আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ এখানে নেই— • টেকসই ভবন • আলাদা এজলাস কক্ষ • পুলিশ ব্যারাক • হাজতখানা • মালখানা (জব্দ মালামাল রাখার ঘর) • জিআরও, পেশকার ও সিএসআই-এর জন্য নির্ধারিত কক্ষ • বিচারকের জন্য খাস কামরা এছাড়া আদালতের অবস্থান গ্রামীণ এলাকায়, চারপাশে নেই সুরক্ষিত বাউন্ডারি। যে কোনো সময় সন্ত্রাসী হামলা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। পরিবহন ও নিরাপত্তা সংকট রাংগাবালী থেকে সাজাপ্রাপ্ত বা হাজত দেওয়া আসামীদের জেলা কারাগারে নিতে হলে অন্তত তিন কিলোমিটার চওড়া আগুনমুখা নদী পাড়ি দিতে হয়। নদীটি সবসময়ই উত্তাল ঢেউ ও ঝড়ো হাওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আবহাওয়া অফিস থেকে সামান্য সতর্ক সংকেত জারি হলেই নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন আসামী পরিবহন করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকট দেখা দিতে পারে, বিশেষত কোর্ট পুলিশের কাছে অস্ত্র না থাকায় আসামী ছিনতাই হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের মতামত বিচারপ্রার্থী অনেকেই জানিয়েছেন, গলাচিপায় আদালত থাকাকালে তাদের জন্য বিচারপ্রক্রিয়া সহজ ছিল। যেহেতু রাংগাবালীর অনেক মানুষের বাসস্থান বা আত্মীয়স্বজন গলাচিপায়, তাই আদালত গলাচিপায় থাকা আরও সুবিধাজনক হতো। কয়েকজন আইনজীবী বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় যে কোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নিরাপত্তা, অবকাঠামো এবং সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থার জন্য রাংগাবালীতে আদালত কার্যক্রম শুরু করার আগে যথাযথ ভবন ও প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা উচিত ছিল। আদালত কর্মচারীর মতামত আদালতে দায়িত্ব পালনরত বেঞ্চ সহকারী মো. সোহেল জানান— “আমাকে এখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাই আমি কাজ করছি। এর বাহিরে আমি কিছু বলতে পারছি না। জিআরও এবং সিএসআই না থাকায় তাদের মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি। সচেতন মহলের মতামত সচেতন মহল মনে করছেন, রাংগাবালীর মতো অনুন্নত ও দুর্গম এলাকায় আদালত কার্যক্রম শুরু করার আগে সঠিক অবকাঠামো নির্মাণ, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি ছিল। ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।