সৈয়দ উসামা বিন শিহাব ষ্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীজুড়ে আবারও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে ধারাবাহিক অগ্নিসংযোগের ঘটনা। সোমবার (১০ নভেম্বর) গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী ও উত্তরার তিনটি স্থানে তিনটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি পরিত্যক্ত প্রাইভেট কারেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সোমবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় রাজধানী পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগে। পরবর্তীতে রাত আনুমানিক দুইটার দিকে কাজলা টোল প্লাজার কাছে রাইদা পরিবহনের আরেকটি বাসে আগুন লাগার খবর আসে। সর্বশেষ মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে উত্তরার জনপথ মোড়ে রাইদা পরিবহনের আরেকটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তিনটি বাসই তখন পার্কিং করা অবস্থায় ছিল এবং বাসের ভেতরে কোনো যাত্রী বা চালক ছিল না। ফলে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিক অনুসন্ধানে ধারণা করা হচ্ছে, যাত্রাবাড়ীর কাজলা টোল প্লাজার কাছে রাইদা পরিবহনের বাসটিতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। এই ঘটনার বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। বাকি দুটি ঘটনায়ও অগ্নিসংযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।”
অন্যদিকে, একই রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি পরিত্যক্ত প্রাইভেট কারেও আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ ধোঁয়া ও আগুনের শিখা দেখা গেলে তারা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি একের পর এক অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে রাজধানীতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টিরও বেশি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ এবং অন্তত তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ ঘটেছে।
এদিকে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন কর্মসূচি’ সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ঘোষিত ওই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মোড়, পরিবহন টার্মিনাল, গ্যারেজ ও জনবহুল এলাকায় টহল জোরদার করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যেসব জায়গায় বারবার নাশকতার ঘটনা ঘটছে, সেসব এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দোষীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।”
এর আগে একই দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে জানা গেছে। সন্ধ্যার পর গুলিস্তান, মালিবাগ, খিলগাঁও ও মিরপুরের কিছু অংশে ককটেল সদৃশ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
রাজধানীতে একের পর এক নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণের ঘটনায় নগরবাসী এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। পরিবহন মালিকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, তারা এখন প্রতিদিন বাস রাস্তায় নামাতে শঙ্কিত।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।