
সৈয়দ উসামা বিন শিহাব স্টাফ রিপোর্টার:
সরকারের কঠোর জিরো টলারেন্স নীতির মধ্যেও রাজধানীর মিরপুর ১১ নং বিহারী মিল্লাত ক্যাম্প যেন পরিণত হয়েছে মাদকের অবাধ রাজ্যে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল, নিয়মিত অভিযান—সবকিছুর মধ্যেই এখানে মাদকবাণিজ্যের ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেট দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে এলাকাবাসীর তীব্র অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, পুরো ক্যাম্পজুড়ে যে ভয়ঙ্কর মাদক সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে, তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন পুলিশের তালিকাভুক্ত কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আনোয়ারী, শাহনাজ, সোনিয়া, সায়মা, শাম্মী ও জামিলা—যাদের সম্পর্কে ক্যাম্পবাসীরা বলছেন,এরা মিল্লাত ক্যাম্পের মাদক সম্রাজ্ঞী। হিরোইন আনোয়ারী কে মাদকের মা হিসেবেও চিনে আসছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্যাম্পে হিরোইনের সবচেয়ে প্রভাবশালী পাইকারি সরবরাহকারী আনোয়ারী। অভিযোগ রয়েছে— সাধারণ ক্রেতাকে নাকি তিনি হিরোইনের কোটি টাকার নিচে মাল দেন না। তার নাম এখন মিল্লাত ক্যাম্প সহ অন্যান্য ক্যাম্পে “মাদকের মা হিরোইন আনোয়ারী” হিসেবেই সবাই চিনে আসছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাইকাররাও নাকি তার সাপ্লাইয়ের ওপর নির্ভরশীল। স্থানীয়রা দাবি করেছেন—দেশের বিভিন্ন স্তরের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে শীর্ষ সন্ত্রাসী পর্যন্ত অনেকে তাকে সমীহ করে চলে। আবার প্রশাসনের সঙ্গে লেনদেনে ফাঁকফোকর দেখা দিলেই তার কোটি টাকার মাল ধরার ঘটনাও ঘটে বলে জানা যায়। ৫০ জন অস্ত্রধারী সিন্ডিকেটের পাহারায় পুরো ক্যাম্প এর অভিযোগ অনুযায়ী, নিজের নিরাপত্তা আর ব্যবসায়িক আধিপত্য বজায় রাখতে আনোয়ারী ৫০ জনের অস্ত্রধারী বাহিনী গড়ে তুলেছে, যারা ক্যাম্পের ভেতর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো পাহারা দেয়।
পরিবার-আত্মীয় সবাই মাদক নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত আছে —অভিযোগের চাপে ভূতুড়ে অবস্থায় মিল্লাত ক্যাম্পবাসী। তাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আছে—ছেলে ওয়াহিদ, ভাগ্নি সায়মা ও সাম্মী, আত্মীয় মাশআলী, মেয়ের জামাই কামরান, সহযোগী মাহতাব—সহ মোট ১৫ জন আনোয়ারীর ব্যবসায় সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে। এদের অনেকের ওপর পূর্বেও মাদক মামলা রয়েছে বলে অভিযোগ। ৩০ সদস্যের কুইক রেসপন্স বাহিনী—অপরিচিত দেখলেই নজরদারি করে থাকে। খুচরা মাদক বিক্রির নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে আনোয়ারী নাকি ৩০ সদস্যের কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করেছে।
তাদের কাজ— ক্যাম্পে অপরিচিত কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তথ্য সংগ্রহ, কোথা থেকে এসেছে–কেন এসেছে নজরদারি, এবং পুরো সিন্ডিকেটকে সতর্ক করে রাখে। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না মিল্লাত ক্যাম্পের সাধারণ মানুষের দাবি— এরা এতটাই ভয়ঙ্কর প্রভাবশালী যে কেউই প্রকাশ্যে অভিযোগ করতে সাহস করে না। ক্যাম্পে বাস করলেও মানুষ নীরবে আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটায়।
স্থানীয়দের দাবি, ক্যাম্পটি এখন শুধু বসতি নয়—এটি একটি সম্পূর্ণ সংগঠিত মাদক সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরএকাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে এবং প্রমাণ মিললে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এলাকাবাসী বলছে—মাদকের এই অন্ধকার সাম্রাজ্য ভেঙে দিতে মিল্লাত ক্যাম্পে বিশেষ অভিযান এখন সময়ের দাবি।