
হাসান তারেক স্টাফ রিপোর্টারঃ
আজ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের কুমিরাঘোনা বায়তুশ শরফ সড়কের আদর্শ পাড়া এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত নুরুল ইসলাম একই ইউনিয়নের ৩ নাম্বার ওয়ার্ডের লালীর বাপের পাড়া এলাকার মৃত আলী আহমদের পুত্র। তার ছেলে শফিকুল ইসলাম বড়হাতিয়া ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সভাপতি।
জানা যায়, ভোরে স্থানীয় লোকজন ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে যাবার পথে ঘটনাস্থলে নুরুল ইসলামকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। বিষয়টি তার পরিবারকে খবর দেয়া হয়। এ সময় তার শরীরের অর্ধেক অংশ টেক্সির ভেতর, আর অর্ধেক অংশ সড়কের উপর পড়ে ছিল। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
একইদিন দুপুরে ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘটনাস্থলের কাছেই আখতারাবাদ কালু ব্রিক ম্যানুফ্যাকচার্স ইটভাটার অফিসে দাবীকৃত চাঁদা না দেয়ায় হানা দেয় অস্ত্রধারী স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী। এ সময় অফিসে থাকা ইটভাটার কর্মচারী তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে সন্ত্রাসীরা অফিসের আসবাবপত্র ও সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংচুর করে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে টেক্সিচালক নুরুল ইসলাম কুমিরাঘোনা বায়তুশ শরফ সড়ক হয়ে যাত্রী আনার জন্য যাচ্ছিলেন। ইটভাটা এলাকায় পৌঁছলে সড়কের উপর একদল অস্ত্রধারী লোকজন দেখতে পান। তাৎক্ষণিক তিনি ভয়ে টেক্সি ঘুরিয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। এ সময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা টেক্সির পেছনে গুলি করে। ফলে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০ গজ দূরে গিয়ে টেক্সির ভেতর তারমৃত্যু হয়। ভোর ৪টার দিকে ঘটনাস্থলের আশপাশে বসতঘরে থাকা লোকজন গুলি শব্দ শুনেছেন। তবে ঘর থেকে কেউ বাহির হননি। এই ঘটনার প্রায় ১০ দিন আগে ইটভাটার মালিক পক্ষের মঞ্জুর আলম কোম্পানী নামে একজনকে অপহরণ করেছিল সন্ত্রাসী বাহিনী। পরে মুক্তিপণে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
অপরদিকে, ঘটনার কয়েকদিন আগে স্থানীয় সন্ত্রাসী তৌহিদকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করতে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সন্ত্রাসী তৌহিদের সাথে পুলিশের গুলাগুলির ঘটনাও ঘটেছিল। পরে তৌহিদ কৌশলে পালিয়ে গেছে।
এছাড়া চলতি সনের ১১ আগস্ট দিনগত রাতে উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের কুমিরাঘোনা চাকফিরানী কালীনগর এলাকায় তৌহিদ বাহিনীর হামলায় গুরতর আহত হয়েছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিক আহমদ (৫০)। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তার দুই ছেলে মিজবাহ উদ্দিন মিশাল (২৩) ও মো. ফয়সাল (২৬)।
নিহতের ছেলে শফিকুল ইসলাম জানান, তার পিতা বিশেষ করে রাতেই ভাড়ায় টেক্সি চালিয়ে যাত্রীসেবা দেন। গত মঙ্গলবার দিনগত রাত ৮টার দিকে তিনি টেক্সি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। ভোরে মুঠোফোনে জানতে পারে তার পিতা সড়ক দূর্ঘটনায় গুরতর আহত হয়েছেন। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। তার পরনে শীতের কাপড় থাকায় প্রথমে গুলির চিহ্ন দেখতে পাইনি। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার পিতাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় তার পিঠে একাধিক গুলির চিহ্ন দেখতে পেয়েছি।
আখতারাবাদ কালু ব্রিক ম্যানুফ্যাকচার্স ইটভাটার মালিক পক্ষের নাছির উদ্দিন জানান, কিছুদিন আগে ওই ইটভাটার মালিক পক্ষের একজনকে অপহরণ করেছিল স্থানীয় সন্ত্রাসী তৌহিদ বাহিনী। পরে মুক্তিপণ দিয়ে তাকে মুক্ত করা হয়। এরপর ইটভাটা থেকে পুণরায় চাঁদা দাবী করে ওই সন্ত্রাসী বাহিনী। দাবীকৃত চাঁদা না দেয়ায় গত মঙ্গলবার দুপুরে সন্ত্রাসীরা এসে ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের তাড়িয়ে দেয়। রাতে এসে ইটভাটার অফিসের আসবাবপত্র ও সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংচুর করে। এ ঘটনায় তারা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারলে তারা বহু আর্থিক লোকসানের সম্মুখিন হবেন বলে জানান।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. শারমিন আরজু জানান, নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
লোহাগাড়া থানার এসআই মাঈন উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে মরদেহের সুরতহাল লিপিবদ্ধ করেন। নিহতের শরীরের বিভিন্নস্থানে প্রায় ২৬টি ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া টেক্সিতেও রয়েছে গুলির চিহ্ন। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী ও লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল। এএসপি মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলেছি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।