
মোঃ শফিকুর রহমান মিরপুর প্রতিনিধি :
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে “গুম” একটি অন্ধকার অধ্যায়, যা কখনোই মুছে ফেলা যাবে না। এই দেশের হাজারো পরিবার এখনও তাদের হারানো প্রিয়জনের জন্য শোকাবহ অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে। তাদের একমাত্র প্রার্থনা- তাদের সন্তান, ভাই, বাবা, স্বামী ফিরে আসুক। কিন্তু বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে, এবং প্রতিটি ফিরে না আসা মুখের সাথে ফিরে আসছে শুধু শূন্যতা, শোক, আর কান্না। এই শোকের গভীরতা থেকে উঠে এসেছে এক সাহসী নাম- সানজিদা ইসলাম তুলি। তুলি শুধু তার নিজের ভাই সাজেদুল ইসলাম সুমনকে হারাননি, তিনি হারিয়েছেন একটি পুরো জাতির নৈতিকতা। সুমন ছিলেন বিএনপির তরুণ নেতা, যাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গুম করে। তবে, যখন তার ভাই হারানোর পর তার পরিবার ভেঙে পড়তে পারতো, তুলি ভেঙে পড়েননি। বরং, তিনি গুমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বুঝেছিলেন, প্রতিটি হারানো প্রাণের পিছনে একটি পরিবার রয়েছে, যারা একাই লড়াই করছে, একাই কান্না করছে, একাই নিঃস্ব। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য, সানজিদা ইসলাম তুলি প্রতিষ্ঠা করলেন “মায়ের ডাক” আন্দোলন। এই আন্দোলন কেবল একটি সংগঠন নয়; এটি একটি প্রতিবাদ, একটি সোচ্চার আওয়াজ, যা গোটা জাতির বিবেককে জাগিয়ে তোলার শপথ নিয়েছে। যেমন আর্জেন্টিনায় “মাদারস অফ দ্য মায়ো” আন্দোলন শুরু হয়েছিল, যেখানে নিখোঁজ হওয়া সন্তানদের জন্য আর্জেন্টিনার মা-বোনেরা লড়াই করেছিলেন, তেমনি “মায়ের ডাক” বাংলাদেশেও হয়ে উঠেছে নিখোঁজ মানুষের পরিবারের প্রতীক। তুলির নেতৃত্বে, এই আন্দোলন শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ, ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ‘, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল‘ সহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ইস্যুতে তাদের ভূমিকা রেখেছে। সুইজারল্যান্ডে দাঁড়িয়ে, সানজিদা ইসলাম তুলি বলেছিলেন, “আমার ভাইকে ফিরিয়ে দাও।” এই একটি বাক্যই শুধু মানবতার কাছে, বাংলাদেশের আর্তনাদের কাছে, এক অদম্য প্রত্যয়ের সাক্ষর হয়ে রইল। আজ, সানজিদা ইসলাম তুলি ঢাকা-১৪ আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তার প্রার্থী হওয়া শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়; এটি এক বিরাট প্রতিবাদ, এক আদর্শের যাত্রা। একদিকে যেখানে দেশ তীব্র রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত, সেখানে তুলি তার নেতিবাচকতার মধ্যেও ন্যায়, মানবতা এবং নিপীড়িতদের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তুলির এই সংগ্রাম নিছক রাজনৈতিক নয়, এটি একটি জাতির নৈতিক শক্তির পুনর্জাগরণ। এই জাতির বিবেক ফিরে পেতে, এই জাতির অপরাধ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য একজন সাহসী নেতার প্রয়োজন। সানজিদা ইসলাম তুলি সেই নেত্রী, যিনি তার নিজের ভাইকে হারিয়ে, গুমের শিকার হাজারো পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে, তাদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। তার সংগ্রামটি এক মানবিক আন্দোলন, যা ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, এবং নিপীড়িত মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো। তুলি বলেন, “তোমরা যতই ভয় দেখাও, কিন্তু আমরা থামব না।”সত্যিই, তিনি থামেননি। নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়া মানে এক জাতির বিবেকের পুনর্জীবন। সানজিদা ইসলাম তুলি ধানের শীষে ভোট পাওয়ার যোগ্য একটি প্রার্থী, কারণ তিনি শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি একটি আদর্শ, একটি প্রতীক। তাকে সমর্থন দেওয়া মানে গুমের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, এবং মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো। আজ যখন আমাদের সামনে নির্বাচন এসেছে, আমরা যদি সেই প্রার্থীকে ভোট দিই, যিনি নিঃস্ব, অন্ধকারে নিখোঁজ মানুষের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তবে এটি হবে এক মহান কাজ। এটা হবে ভোটের মাধ্যমে ন্যায়বিচার এবং মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো। এটি শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, এটি এক ইতিহাসের সঙ্গী হওয়া। সানজিদা ইসলাম তুলি শুধু বিএনপির প্রার্থী নয়, তিনি বাংলাদেশের মানবিক শক্তির প্রতীক। তাঁর নির্বাচিত হওয়া মানে, “মায়ের ডাক”-এর আওয়াজকে প্রতিধ্বনিত করা, বাংলাদেশের আগামী প্রজন্মকে এটা শেখানো যে, তারা একা ছিল না- বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে ছিল। আমরা যদি সত্যি সত্যি মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে চাই, তবে সানজিদা ইসলাম তুলিকে ভোট দিন। লায়ন ডঃ এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ লেখক সাংবাদিক কলামিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী