মোঃ আতাউর রহমান মুকুল, সিনিয়র স্টাফ রিপোটার:
বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় সূচিত হলো এক নতুন অধ্যায়। দীর্ঘদিন পর এবার বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল (Bangladesh Homoeopathic Medical Education Council) হতে চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন সনদপত্র প্রদান শুরু হয়েছে।
নতুন এই সনদপত্রে পুরনো “Bangladesh Homoeopathic Board” ও “Bangladesh Homoeopathic Practitioners Ordinance 1983” শব্দ বাদ দিয়ে সংযোজন করা হয়েছে— “Bangladesh Homoeopathic Medical Education Council”
এবং
“Bangladesh Homoeopathic Medical Education Law 2023”
এছাড়া পুরনো বোর্ডের নাম ও প্রতীকের পরিবর্তে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে কাউন্সিলের নতুন লোগো ও সীলমোহর। চিকিৎসকের নামের পূর্বে আগের মতোই “Dr.” উল্লেখ করা হচ্ছে, যা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের মর্যাদাকে আরও সুসংহত করেছে।
চিকিৎসক সমাজের প্রশংসা:
এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা বলেছেন— “এটি যুগোপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত।” তারা মনে করছেন, নতুন আইন ও কাউন্সিলের অধীনে রেজিস্ট্রেশন ইস্যু করা হলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রতি জনগণের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে।
মাঠ পর্যায়ের চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, পুরনো ও নতুন—সকল চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন সনদপত্র কাউন্সিল থেকে পুনঃইস্যু ও নবায়ন করার ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।
অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ার দাবি:
চিকিৎসকদের প্রস্তাব অনুযায়ী, রেজিস্ট্রেশন ও নবায়ন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক করা প্রয়োজন।
তাদের প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী—
আবেদন, ছবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনলাইনে সাবমিট করা,
নির্ধারিত ফি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করা,
আবেদন শেষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও মানি রিসিভ প্রিন্ট করে ৭–১০ দিনের মধ্যে কাউন্সিলে পাঠানো—
এমন একটি আধুনিক, ডিজিটাল ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা চালু করলে চিকিৎসক ও প্রশাসন উভয়ের কাজই সহজ হবে।
সরকারি ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সমাজ আরও দাবি জানিয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিলের সরকারি ওয়েবসাইট চালু করা হোক।
সেই ওয়েবসাইটে—
রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের নাম,
মেডিকেল কলেজের নাম,
কোর্স ও পাসের সাল,
চিকিৎসকের ছবি ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর—
সব তথ্য প্রকাশ করলে জনগণ সহজেই বৈধ ও যোগ্য চিকিৎসক শনাক্ত করতে পারবে।
আইনি কাঠামো ও প্রশাসনিক সংস্কার:
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এর সংবিধিবদ্ধ ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল।
নতুন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন ২০২৩ অনুযায়ী বর্তমানে রেজিস্ট্রেশন সনদপত্র ইস্যু করা হচ্ছে।
চিকিৎসক সমাজের দাবি, কাউন্সিলের সব স্তরে ডিএইচএমএস (DHMS) ও বিএইচএমএস (BHMS) পাস করা যোগ্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের পদায়ন ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির মান ও দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
উপসংহার:
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিলের এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক।
নতুন আইনি কাঠামো, আধুনিক সনদপত্র, ও ডিজিটাল প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথি সেক্টর আরও স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও মর্যাদাপূর্ণ হয়ে উঠবে—এমনটাই আশা করছেন চিকিৎসক ও সাধারণ জনগণ।