সাইদুর রহমান সাজু নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক মহাস্থান বাজারে বসেছিল শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। মেলায় ছোট-বড়, দেশী বিদেশী সব ধরনের মাছ উঠেছিল।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকাল থেকে রাত্রি মহাস্থান বাজারে দুর-দুরান্তের মানুষ আসেন মাছ ক্রয় করতে । মেলা উপলেক্ষে এ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে বড় বড় মাছ ও নতুন সবজি কিনে স্বজনদের আপ্যায়নের আয়োজন চলছে।
জানা যায়, পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণের প্রথমেই শিবগঞ্জের মহাস্থান বাজারে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। অপর দিকে উৎলি বাজারেও মাছের মেলা বসে।এদিনে নবান্ন উৎসব পালন করা হলেও এ উৎসবকে কেন্দ্র করেই প্রতিবছর মাছের মেলা বসে।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ মেলায় এক হাজার মণেরও বেশি মাছ ক্রয় বিক্রয় হয়েছে। এক কেজি থেকে শুরু করে ২০ কেজি ওজনের বাঘার মাছ, ১৬ কেজি ওজনের ব্ল্যাক কার্প, ১৫ কেজি ওজনের কাতল, রুই, ব্রিগেড, বাগার, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ বিক্রি হয় এ মেলায়। তবে গত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম অনেকটায় কম বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। মেলায় বিশালাকৃতির রুই-কাতলা ও মাছগুলো ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ২৪০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে ব্ল্যাক কার্প, ব্রিগেড ও সিলভার কার্প এবং বাঘার মাছ ১ হাজার থেকে ১৫ শত টাকা কেজি দরে ক্রয় বিক্রয় হয়।
মেলায় মাছের পাশাপাশি নতুন শাক-সবজি ও বিভিন্ন ধরনের ফল ক্রয় বিক্রয়েরো পসরা সাজানো হয়। মেলায় নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ২০০থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া মিষ্টি আলু ও কেশর (ফল) প্রতিকেজি ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
মেলায় আসা মাছ ব্যবসায়ী আলম, সাইফুল, ফিরোজ, মোজাম্মেল মোস্তাফিজার রহমান, রশিদ মিয়া , জহুরুল ইসলাম, মহাস্থান গড় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান সাজুকে জানান, মেলায় ছোট-বড় মিলে ১/২ শত মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা ৫ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন। মেলায় মাছ সরবরাহের জন্য সেখানে বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) রাত থেকে ২০/২৫ টি আড়ৎ খোলা হয়। সেসব আড়ৎ থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা পাইকারি দরে মাছ ক্রয করে মেলায় খুচরা বিক্রি করেন।
তারা বলেন, মহাস্থানে নবান্ন মেলায় বিক্রির জন্য আশপাশের এলাকার পুকুরগুলোতে সৌখিন চাষিরা মাছ মজুদ করে রাখেন। এলাকার কে কত বড় মাছ মেলায় তুলতে পারে যেন তারই প্রতিযোগিতা চলে মাছ চাষিদের মধ্যে। এছাড়া আড়ৎদারেরা তো আছেই।
তারা আরও বলেন, এলাকার লোকজনও প্রায় প্রতিযোগিতা করে সাধ্যানুযায়ী তুলনামূলক বিভিন্ন আকারের মাছ ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে যায়। মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব করলেও আশপাশের গ্রামের সব সম্প্রদায়ের মানুষই কেনাকাটা করে। মেলায় ৩য় লিঙ্গের সম্প্রদায়কেও মাছের দোকান থেকে টাকা ও মাছ সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
মহাস্থান বাজারের ইজারাদার ও মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হায়দার আলী, আড়ৎদার ইব্রাহিম হোসেন,, আঃ আলীম, ও আলী হায়দার প্রতিবেদক সাইদুর রহমান সাজুকে বলেন, মেলাটি আগে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও সম্প্রতি তা ব্যাপকতা লাভ করেছে। শুধু আশপাশেরই নয়, বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষ এখানে নবান্নের বাজার করতে এসে মাছের মেলা থেকে মাছ ক্রয় করেন। মেলার পরিবেশ ও শৃংখোলা ভাল ছিল। তবে জায়গা ছোট হওয়াই ক্রেতাদেরকে ঘুরে ঘুরে মাছ ক্রয় করতে বেগ পেতে হয়েছিল। আগামীতে বড় বা খোলা জায়গায় এমেলার আয়োজন করর জন্য ক্রেত বিক্রেতা ও মেলার আয়োজনকারী গণ হাট কর্তৃপক্ষ ও শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সহযেগীতা কামনা করেন।