সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ শাকিল খান রাজু
মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে সরকারের জারি করা দুই মাসের মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ এপ্রিল। তবে শেষ মুহূর্তেও পুর্নবাসনের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি চাল পাননি মনপুরার জেলেরা। ফলে ধার-দেনা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলে পরিবারগুলো।
এই পরিস্থিতি শুধু মনপুরার নয়, বরং নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অন্য উপজেলার জেলেদের অবস্থাও একই।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মনপুরার বিচ্ছিন্ন ঢালচর এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি উত্তর সাকুচিয়ার দক্ষিণ চরগোয়ালিয়া আর্দশ মৎস্যজীবী গ্রামে মতবিনিময় সভায় মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জেলেদের আশ্বস্ত করেছিলেন, তারা নিষেধাজ্ঞা মেনে চললে পুর্নবাসনের চাল ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হবে। এমনকি জেলেদের দাবির প্রেক্ষিতে বরাদ্দ বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন দেখতে পাননি জেলেরা।
জেলে রাকিব, সামাদ, সামছু, রহিম, জামালসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, বেশিরভাগ জেলে এখনো প্রথম কিস্তির চালও পায়নি। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র তিনদিন বাকি, অথচ দ্বিতীয় কিস্তির চালেরও কোনো খোঁজ নেই। তারা জানান, ধার করে সংসার চালাতে গিয়ে আজ বিপাকে পড়েছেন, আর সরকারী আশ্বাস এখন তাদের কাছে মরীচিকার মতো মনে হচ্ছে।
সরকার মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মেঘনা নদীর চর ইলিশা থেকে চরপিয়াল এবং তেতুলিয়া নদীর কালাবাদুর থেকে চররুস্তুম পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। প্রতি জেলের জন্য দুই কিস্তিতে মোট ৮০ কেজি চাল বরাদ্দের কথা ছিল।
মনপুরা উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলে আছেন ১৪,৩৪৭ জন। প্রথম কিস্তিতে চাল বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৬,৬০০ জনের জন্য। ফলে অনেক জেলেই চাল পেতে বঞ্চিত হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির চালও এখনো উপজেলায় এসে পৌঁছায়নি।
মনপুরা জেলে সমিতির নেতা ইব্রাহিম মাঝি, রতন মাঝি, সাহাবুদ্দিন মাঝিরা জানান, এইবার অর্ধেকেরও কম সংখ্যক জেলে প্রথম কিস্তির চাল পেয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির চাল না পেয়ে জেলে পরিবারগুলোতে এখন নীরব কান্না চলছে। বরাদ্দ কমে যাওয়ায় আগামীতে নিষেধাজ্ঞা মানা কঠিন হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ উপদেষ্টা যে বরাদ্দ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন, বাস্তবে বরাদ্দ কমে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ জেলেরা। আগের বছরগুলোর তুলনায় এ বছর সময়মতো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল না পাওয়ায় ক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন বলেন, বরাদ্দপ্রাপ্ত চাল ইউনিয়নভিত্তিক ভাগ করে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির চাল বরাদ্দ না আসায় বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিখন বণিক জানান, চাল বরাদ্দের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে দ্রুত জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে হলেও চাল না পাওয়ায় জেলেদের মধ্যে তীব্র হতাশা বিরাজ করছে।