জাহাঙ্গীর আলম
(ক্রাইম রিপোর্টার)
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ৮নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে সরকারি ন্যায্যমূল্যে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম, স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় অনেক সুবিধাভোগী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা নিয়মিত চাল পাচ্ছেন না। অভিযোগ রয়েছে, ডিলার ইলিয়াস ভূঁইয়া (পিতা: ওয়াজ উদ্দিন ভূঁইয়া) দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিতরণ কার্যক্রমে অনিয়ম শুরু হয়েছে।
তাদের দাবি, অনেকের কাগজপত্র আত্মসাৎ করে চাল অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী বিতরণ না হওয়ায় প্রকৃত দরিদ্র মানুষরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
অভিযোগে উপজেলা পর্যায়ের সহকারী ফুড অফিসার মেহেদী হাসান-এর নামও উঠে এসেছে। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, তার জ্ঞাতসারে ও নির্দেশনায় ডিলাররা সরকারি চাল নিয়ন্ত্রিত কাগজপত্রে বিকৃতি ঘটিয়ে বিতরণ করছেন।
তারা দাবি করেন, “তদন্ত হলে প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে—সরকারি চাল আত্মসাৎ হচ্ছে এবং তা প্রশাসনের একাংশের ছত্রছায়ায় চলছে।”
রিপোর্টারের সঙ্গে যোগাযোগে কয়েকজন অভিযোগকারী জানান, যখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন করা হয়, তারা এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে কোনো ধারণা নেই বলে জানান এবং পূর্ণ তদন্তের নির্দেশ দেন।
সাংবাদিকরা সহকারী ফুড অফিসার মেহেদী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি প্রথমে ফোন ধরেননি। পরে কল ফেরত দিয়ে প্রতিবেদকের প্রতি হুমকিসূচক ভাষায় বলেন— “তোরা বিজয়নগর আস, তোদের দেখে নিব।”
এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ ও সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক, বিজয়নগর থানার ওসি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
একজন সুবিধাভোগী বলেন, “কয়েক মাস ধরে নিয়মিত চাল পাই না। আমাদের নামে স্বাক্ষর জাল করে অন্যের হাতে চাল দেওয়া হচ্ছে।”
আরেকজন জানান, “চাল না পেয়ে আমরা চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছি—বিশেষ করে বয়স্ক ও অসহায় নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।”
স্থানীয়রা চান, বিষয়টি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গভীর তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন করা হোক, অভিযুক্ত ডিলার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং বিতরণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়মিত মনিটরিং নিশ্চিত করা হোক।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগে অভিযুক্ত ডিলার ইলিয়াস ভূঁইয়া ও উপজেলা ফুড অফিসার মেহেদী হাসান-এর মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে মেহেদী হাসানের কাছ থেকে সাংবাদিকের প্রতি হুমকিমূলক প্রতিক্রিয়া এসেছে।
বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া পেলে পরবর্তী প্রতিবেদনে তা প্রকাশ করা হবে।
সরকারি সহায়তার চাল বিতরণ কর্মসূচি মূলত দরিদ্র জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য। তাই এই অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। স্থানীয়রা দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি ও বিতরণ ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করেছেন।
রিপোর্টার জানিয়েছেন—তদন্ত ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া পেলে পরবর্তী আপডেট প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।