আশীষ বিশ্বাস সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার:
নীলফামারী ও পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্নস্থান শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিক্ষিপ্তভাবে বৃস্টি হচ্ছে। এদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নীলফামারীর ডিমলায় ও জলঢাকা ৮৪ মিলিমিটার ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ১৭৮ মিলিমিটার বৃস্টিপাত রেকর্ড করা হয় রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত (রাত ১০ টা) বৃস্টিপাত অব্যাহত ছিল। এর ফলে উত্তরাঞ্চলে শীতের আগমন আগেভাগেই অনুভ‚ত হচ্ছে। এছাড়া এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলের অন্যতম সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এদিকে ভারী বৃস্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে হু-হু করে পনি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নীলফামারী,পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ধীরে ধীরে কমবে। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে এবং বাতাসে আর্দ্রতার কারণে সকালবেলা কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গজুড়ে শীতের প্রভাব স্পষ্টভাবে অনুভূত হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।স্থানীয়দের অনেকে জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিতে চারপাশে ভেজা ভাব ও ঠান্ডা বাতাস বইছে -যা শীতের আগমন বার্তা দিচ্ছে আগেভাগেই। দেখা গেছে আজ শুক্রবার ভোর থেকে বেলা যত বেড়েছে অন্ধকার তত নেমেছে। এ অঞ্চলের প্রতিটি এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃস্টি শুরু হয়। আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা কিছুতেই কাটেনিা। অপরদিকে ভারী বৃস্টিপাত উজানের ঢলের আশংঙ্কা করা হচ্ছে। ৬ ঘন্টায় তিস্তায় ২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সর্তকীকরণ কেন্দ্রের গেজরিডার নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচগেট খুলে রাখা হয়েছে। রাতে তিস্তায় আরও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে ভারী বর্ষনের কারনে উজানের তিস্তায় গোজলডোবা ও কালিঝাড়া থেকে দফায় দফায় পানি ছাড়ার খবর পাওয়া গেছে। ভারতীয় এসআই নিউজ জানায় সকাল থেকে তিস্তার গোজলডোবায় ৭৫৬ কিউমেক ও কালিঝাড়া থেকে ৯৮৭ কিউমেক পানি ছাড়া হয় প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায়। পাহাড়ে বৃস্টির রেশ বাড়লে আরও পানি ছাড়া হবে এমনটাই বলা হয় এসআই নিউজে। ফলে তিস্তা নদীতে নতুন করে ভাঙ্গন ও বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে চিন্তায় পড়েছে কৃষক ও নদীপাড়ের বসবাসকৃত পরিবারগুলো। এদিকে বৃস্টি ও বাতাসে শীতের আমেজ লক্ষ্যকরা যাচ্ছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিন্ম তাপমাত্রার পার্থক্য কাছাকাছি চলে এসেছে। আবহাওয়া অফিস বলছে ক্রমেই দুর্বল হয়ে ইতোমধ্যে সুপষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোন্থা। বর্তমানে এটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের উত্তর ছত্তিশগড় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। সেখান থেকে ভারতের দর্জিলিং,জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের রংপুর,রাজশাহী ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে এই বৃস্টি বলয় সৃস্টির করেছে। এই বৃস্টির মধ্যেই ক্রমেই দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা বিদায় নিচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী রংপুর অঞ্চলে কালোমেঘের ঘনঘটায় সকাল থেকে বিক্ষিপ্ত বৃস্টিপাত চলছে। ঘড়ির কাটা ছাড়া সকাল, দুপুর, বিকাল ও সন্ধ্যা বোঝাই ভার হয়ে পড়ে।এমন আবহাওয়া আগামী রবিবার পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে আগামী সোমবার(৩ নভেম্বর) আকাশ পরিস্কার হয়ে যাবে। এদিকে অসময়ের বৃস্টিতে আগাম আলু চাষে ক্ষতি ডেকে আনতে পারে বলে আলু চাষি ফজলকাদির জানান। পাশাপাশি আমন ধানের ক্ষেতে কারেন্ট পোকাও আক্রমন করতে পারে বলে অপর কৃষক রমজান আলী জানালেন। নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, বৃস্টির জেরে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বৃস্টি হচ্ছে। এখন দিন যত যাবে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। তিনি জানান,এখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেশি কমে গেছে। তাই সর্বোচ্চ ও সর্বনিন্ম তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গেছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে এলে শীতের অনুভ‚তি বেড়ে যায়। এখন কোথাও সর্বোচ্চ ও সর্বনিন্ম তাপমাত্রার পার্থক্য ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও কম। তিনি আরও জানান,শুক্রবার তেঁতুলিয়ায় সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ২০.০৬ ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২১.০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তেমনি ভাবে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ২১.৬ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫.০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও নীলফামারীর ডিমলায় ও জল ঢাকা সর্বনিন্ম ২১.৬ এবং সর্বোচ্চ ২২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। সূত্র মতে রংপুর অঞ্চলের প্রতিটি এলাকায় তাপমাত্রা কমছে ঠিক একই ভাবে।তিনি আরও বলেন, বৃষ্টিপাত কমে গেলে হঠাৎ করেই শীতের অনুভ‚তি বেড়ে যাবে।