
নিজস্ব প্রতিবেদক # ভোলার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা বর্তমানে ন্যায়সঙ্গত নয়। নিয়মিত ডাক্তার উপস্থিতি না থাকা, বিশেষজ্ঞদের উপর অতিরিক্ত চাপ এবং বহি বিভাগের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কারণে লালমোহন উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষ সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়ছে। অনিয়ম ও অবহেলার লালমোহন হাসপাতাল নিজেই একটা আস্ত রোগীতে পরিণত হয়েছে !! পাঁচটি মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো চিকিৎসা। কিন্তু লালমোহনের জনগণ এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়ম, উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে চিকিৎসা সেবা এখন প্রায় ‘তামাশা’র পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালটিতে কর্মরত আছেন মাত্র ৯ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে রয়েছেন দুইজন কনসালটেন্ট, একজন ডেন্টাল সার্জন, একজন হারবাল চিকিৎসক, চারজন মেডিকেল অফিসার এবং একজন আরএমও। কিন্তু বাস্তবে বহি বিভাগে নিয়মিত চিকিৎসা প্রদান করছেন মাত্র চারজন চিকিৎসক। স্থানীয়দের অভিযোগ, ডেন্টাল সার্জন এবং হারবাল চিকিৎসককেও সাধারণ রোগীর প্রেসক্রিপশন দেওয়ার জন্য বসানো হয়েছে। চারজন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে অনেকে মাসে মাত্র দুই-তিনবার এসে ৪৮ ঘণ্টা ডিউটি শেষ করে চলে যান। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না করা এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টে উপস্থিতি না দেওয়াই তাদের নীতি। ফলশ্রুতিতে হাসপাতালের বহি:বিভাগের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে একজন মেডিকেল অফিসার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “আমরা নিয়মিত ডিউটি করি, তবে কখনও কখনও কর্মী সংকট ও পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণে উপস্থিত থাকা কঠিন হয়। বর্তমানে আমাদের টিএস স্যার নেই। বাকিটা আরএমও স্যারের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন।” হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী সালাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, “ডাক্তার পেতে অনেক অপেক্ষা করতে হয়। টিকেট নিয়ে দাঁড়ালেও হারবার ও ডেন্টিস দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। আমি জ্বর ও ঠান্ডা নিয়ে এসেছি, বুকে হালকা ব্যথা অনুভব করছি, কিন্তু সঠিক চিকিৎসা পাইনি।” বহু মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ফিরেও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে গেছেন। এব্যাপারে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. মোহাসিন বলেন, “২৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে ৯ জন কর্মরত। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। অভিযোগগুলো যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহে ৮/৯ জন ডাক্তার যোগদান করলে সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে।” ভোলার সিভিল সার্জন ডা. মনিরুজ্জামান জানান “আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ডাক্তার কেন আসবে না, তা দেখা হচ্ছে। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু লালমোহনের জনগণ স্বাস্থ্য সেক্টরের অবহেলা,উদাসীনতা ও অনিয়মের কারণে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় দ্রুত শৃঙ্খলা ফেরানোর দাবি জানিয়েছেৎলালমোহনের ভুক্তভোগী আপামর জনসাধারণ।