
খন্দকার জলিল, স্টাফ রিপোর্টার
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চর বিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক বিশাল জনসভা। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় চর বিশ্বাস বাজারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিলেন গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা। (জরুরী কাজের জন্য উপস্থিত হতে পারেননি) প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও গলাচিপা-দশমিনা আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হাসান মামুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিলেন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন, গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিদ্দিকুর রহমান, গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার হাওলাদার এবং দশমিনা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহআলম শানু। সভায় সভাপতিত্ব করেন চর বিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. বাকের বিশ্বাস এবং সঞ্চালনা করেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান।
সভা শুরু হওয়ার আগে চর বিশ্বাসের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একের পর এক মিছিল এসে সভাস্থলকে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে। পুরো চর বিশ্বাস বাজার জনসমুদ্রে পরিণত হয়, যেন তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত, পবিত্র গীতা পাঠ ও জাতীয় এবং দলীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সভার কার্যক্রম শুরু হয়।
বক্তারা বিএনপির ভবিষ্যৎ করণীয়, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান বক্তা হাসান মামুন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তার বক্তব্য শুরু করেন। শুরুতেই তিনি জনসভায় উপস্থিত বিপুল জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচন নয়—এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভবিষ্যৎ এবং ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণের নির্বাচন। এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত না হলে দেশ ও দল উভয়ই গভীর সংকটে পড়বে। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই নির্বাচনে আমাদের জয় নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “ইতিপূর্বে জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলনসহ বিশটিরও বেশি দল বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ ছিল। শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন কিছু দল বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, আবার কিছু দল বিরোধিতায় গেছে। এনসিপির সঙ্গে আলোচনা চলছে—জোট হতে পারে, নাও হতে পারে; তবে জোট হোক বা না হোক, বিএনপি এককভাবেই জনগণের পাশে থাকবে এবং নির্বাচনে এগিয়ে যাবে।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদি আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়, তাহলে অতীতের মতোই স্বৈরাচারী ও অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তাই জনগণকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।” গলাচিপা-দশমিনা আসনে দীর্ঘ ৪৬ বছরের অনুন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে হাসান মামুন বলেন, “এই আসনে দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃত প্রতিনিধি পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতায় থেকেও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় না থাকলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। যদি জনগণ আমাকে বিশ্বাস করে সুযোগ দেয়, তাহলে এই দুই চর- অর্থাৎ চর বিশ্বাস ও চর কাজলকে একত্র করে একটি প্রশাসনিক থানা ও উপজেলা ঘোষণা করবো ইনশাআল্লাহ।”
তিনি আরও বলেন, “ভোলা জেলার সঙ্গে সীমানা বিরোধের বিষয়টি বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রশাসনিকভাবে সমাধান করে এক ইঞ্চি জমিও হারাতে দেব না। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসপ্রবণ এই অঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই ভেড়িবাঁধ, উন্নত রাস্তা-ঘাট এবং আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।”
চর বিশ্বাস ও চর কাজলের শিক্ষা, চিকিৎসা ও কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “এই দুর্গম অঞ্চলে একটি আধুনিক হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। উপজেলা ঘোষণা করা হলে এখানে কৃষি, শিল্প ও প্রশাসনিক উন্নয়ন ঘটবে।”
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা যুগ যুগ ধরে একসঙ্গে বসবাস করে আসছি, ভবিষ্যতেও একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবো। কেউ হুমকি দিলে ভয় পাবেন না, বিএনপি আপনাদের পাশে আছে। আপনাদের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবো এবং সব ধরনের সহযোগিতা করবো।”
শেষে তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।