
তদন্তে বেরিয়ে এলো ভয়াবহ প্রতারণার কৌশল — ৬০ লক্ষ টাকার সম্পদ হাতিয়ে, শেষে মিথ্যা মামলা করে ফাঁসানোর চেষ্টা নিজস্ব প্রতিবেদক: মানুষের বিশ্বাস যখন ব্যবসায় রূপ নেয়, তখন সম্পর্কও হয় প্রতারণার শিকার। ঠিক এমনই এক হৃদয়বিদারক কাহিনি এখন আলোচনায়— ধামরাইয়ের আমেনা বেগম নামের এক নারীর প্রতারণার জাল।একাধিক বিবাহ, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, আর কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এখন তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত স্মারক নং-অপরাধ/২০২৫/৩১১৯/ভি, তারিখ-২৯/০৯/২০২৫ খ্রি. নথি অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবী মোঃ শাহাদাৎ হোসেন (৫২) তার জবানবন্দিতে এক ভয়াবহ সত্য তুলে ধরেছেন। বিবাহের নামে প্রতারণা, অজান্তেই ষষ্ঠ স্বামী!২০২২ সালের ৩০ জুন ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে কাবিন সম্পন্ন হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই শাহাদাৎ জানতে পারেন আমেনা বেগমের এটি তার ষষ্ঠ বিবাহ! পূর্বের পাঁচ স্বামীর তালিকা চাঞ্চল্য তৈরি করেছে প্রথম স্বামী, মিজানুর রহমান (মুদি ব্যবসায়ী), ধামরাই, ঢাকা। দ্বিতীয় স্বামী,মোজাম্মেল হক (সৌদি প্রবাসী), টাঙ্গাইল। তৃতীয় স্বামী আলম (সাভার ফুটপাতের ব্যবসায়ী)।চতুর্থ স্বামী ফিরোজ(ড্রাইভার),আশুলিয়া।পঞ্চম স্বামী হায়দার রহমান (ব্যবসায়ী), কুষ্টিয়া।এদের প্রত্যেকের সংসারই ভেঙেছে অবাধ্যতা, অনৈতিক আচরণ ও আর্থিক লোভের কারণে, এমন তথ্য উঠে এসেছে স্থানীয় সূত্রে। বিশ্বাসের সুযোগে হাতিয়ে নিল ৬০ লক্ষ টাকার সম্পদ,বিবাহের পর আমেনা বেগম স্বামী শাহাদাৎ-এর কাছ থেকে একের পর এক অর্থ দাবি করতে শুরু করেন। পুকুর ভরাট”, “বাউন্ডারি ওয়াল”, “বেইজমেন্ট নির্মাণ” ইত্যাদি অজুহাতে কৌশলে তিনি হাতিয়ে নেন প্রায় ৫৯ লক্ষ টাকা, যা শাহাদাৎ হোসেন তার কেরানীগঞ্জের জমি বিক্রি করে ব্যয় করেন।এর বাইরেও তার হাতে ১৭-১৮ লক্ষ টাকা নগদ গচ্ছিত ছিল বলে দাবি করেছেন শাহাদাৎ হোসেন। সে দামি পোশাক, স্বর্ণালংকার, মোবাইল, পারফিউম— বিলাসী জীবনযাপনের নামে একের পর এক টাকা নিতে থাকে। আমি বাধা দিলে সে গালাগালি, হুমকি এমনকি শারীরিক নির্যাতনও করত। জবানবন্দি থেকে শাহাদাৎ হোসেন তালাকের পর প্রতিশোধ মিথ্যা মামলা দায়ের অসহ্য নির্যাতনের কারণে শাহাদাৎ হোসেন ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে ‘তালাকে বায়েন’ প্রদান করেন, যা ১৬ ডিসেম্বর কাজী অফিসে নথিভুক্ত হয়। তবে কিছুদিন পর আমেনা বেগম সংশোধনের অঙ্গীকার” করে ফের সংসারে ফিরে আসেন— কিন্তু পরিস্থিতি হয় আরও ভয়াবহ।অবশেষে শাহাদাৎ দ্বিতীয়বারের মতো তালাক বহাল রাখেন।এরপর আমেনা প্রতিশোধ নিতে গিয়ে শাহাদাৎ-এর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং-০৯, ঢাকা-এ পিটিশন মামলা নং-০৭/২৫, ধারা ৯(১) দায়ের করেন। তদন্তে সত্য উদ্ঘাটন: এস.আই (নিঃ) জিয়াউর রহমানের নিরপেক্ষ ভূমিকা উক্ত মামলার তদন্তভার পান ধামরাই থানার এস.আই (নিঃ) জিয়াউর রহমান।তদন্তে সাক্ষ্য, প্রতিবেশী বক্তব্য ও আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়— শাহাদাৎ হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হলে আদালতও বিষয়টি প্রতারণা ও প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড বলে মন্তব্য করেন।তদন্তে উঠে আসা মূল তথ্য:আমেনা বেগমের একাধিক বিবাহের প্রমাণ মিলে।তিনি শাহাদাৎ হোসেনের কাছ থেকে মোট ৭৫ লক্ষ টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে প্রাথমিক তথ্য।মিথ্যা মামলা দায়ের করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেছেন।স্থানীয়দের মতে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধামরাই ও সাভার এলাকায় বিবাহ প্রতারণা চক্রের অংশ। শাহাদাৎ হোসেনের দাবি আমি শুধু একজন সৎ মানুষ হিসেবে জীবনের সঞ্চয় দিয়ে সংসার গড়তে চেয়েছিলাম। এখন সব হারিয়েছি— মানসম্মান, অর্থ, বিশ্বাস— সবই। আমি চাই প্রশাসন এই নারী প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনুক। বঙ্গবন্ধু আইন কলেজের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান বলেন,বিবাহ প্রতারণা এখন একটি সামাজিক মহামারি। এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও উদাহরণমূলক শাস্তি ছাড়া সমাজে নারীর আসল মর্যাদাও ক্ষুণ্ন হয়।