
মোঃমঈন উদ্দিন উজ্জ্বল , মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :
৩৫ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে লিভ প্রিপারেটরি টু রিটায়ারমেন্টে (এলপিআর) যাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা কৃতিস দাস। ১৯৮৯ সালের ২৯ জুন স্বাস্থ্য সহকারী পদে যোগদান করা এই কর্মকর্তা ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে অবসরে যাচ্ছেন। তবে চাকরিতে যোগদানের সময় প্রকৃত জন্মস্থান গোপন করে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছেন—এমন অভিযোগ সামনে এসেছে।
মাত্র ৭০০ টাকা বেতন নিয়ে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি শুরু করলেও অবসরের সময় তাঁর বেতন স্কেল দাঁড়িয়েছে ২৬,৫৯০ টাকা। চাকরিতে যোগদানের সময় কৃতিস দাস নিজের জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার সাতবর্গ গ্রামের বদলে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আদাঐর গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করেন। অভিযোগ রয়েছে—সেই সময় আদাঐরে তাঁর কোনো স্থায়ী সম্পত্তিই ছিল না।
কৃতিস দাস নিজেকে আদাঐরের স্থায়ী বাসিন্দা দাবি করলেও স্থানীয়ভাবে তাঁর কোনো বসতবাড়ি বা দীর্ঘদিনের উপস্থিতির নিশ্চয়তা মেলেনি।
আদাঐর গ্রামের ইউপি সদস্য কেশব দাস বলেন, “আমার জানামতে কৃতিস দাসের আসল বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাতবর্গে। ছাত্রজীবনে তিনি আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পড়েছেন।” বিজয়নগরের সাতবর্গ গ্রামের ওয়ার্ড সদস্য আশিক মেম্বারও একই তথ্য দেন। “কৃতিস দাস আমাদের গ্রামেরই মানুষ। তাঁর পূর্বপুরুষ এখানকার।”
অন্যদিকে আদাঐর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর মো. খুরশেদ আলম বলেন,“কৃতিস দাস আমার ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা নন। তিনি কীভাবে আদাঐরের ঠিকানা ব্যবহার করে চাকরি নিলেন, তা আমার জানা নেই।”
যদিও কৃতিস দাস সাতবর্গের ঠিকানার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি—জন্মসূত্রে তিনি বিজয়নগরের সাতবর্গ গ্রামেরই নাগরিক।
মাধবপুর থানার ডিএসবি (ডিটেকটিভ শাখা)–এর সাম্প্রতিক তদন্তে উঠে এসেছে—চাকরিতে যোগদানের বহু পরে কৃতিস দাস আদাঐর গ্রামে এক টুকরো জমি কিনেছেন। ওই জমিতে তিনি বাড়ি নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী, ১৯৮০ সালের পর থেকে মাঠপর্যায়ের পদে আন্তঃজেলা নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়। স্থানীয় প্রার্থী না পেলে অন্য জেলার যোগ্য প্রার্থীকেও নিয়োগ দেওয়া যায়।
হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “তৎকালীন কেন্দ্রীয় নিয়োগনীতির আওতেই তিনি হবিগঞ্জে চাকরি পেয়েছিলেন।” জনস্বাস্থ্য বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “আন্তঃজেলা নিয়োগ বৈধ। তবে জন্মস্থান সংক্রান্ত তথ্য যাচাইযোগ্য নথি দিয়ে নিশ্চিত করতে হয়।”
জন্মস্থান ইস্যুতে কৃতিস দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “সাতবর্গে আমার বাড়ি নেই, আমার বাড়ি আদাঐরে।” এরপর জন্মস্থান নিয়ে পরবর্তী প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন এবং পরে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইমরুল হাসান বলেন, “বিষয়টি পুরোপুরি প্রশাসনিক। কোনো অসঙ্গতি থাকলে পেনশন প্রক্রিয়ায় তদন্তের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।”
৩৫ বছরের স্বাস্থ্যসেবা শেষে যখন কৃতিস দাস অবসরের পথে, ঠিক সেই সময় জন্মস্থান বিতর্ক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে মাধবপুর ও বিজয়নগরে।
এখন স্থানীয় জনসাধারণের একটাই প্রশ্ন—আসলে তাঁর প্রকৃত জন্মস্থান কোথায়, আর এই বিরোধে কী সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ?