শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন
ঘোষনা
সিরাজগঞ্জ সলঙ্গায় গণধর্ষণ মামলার এজাহারনামীয় পলাতক প্রধান আসামি গ্রেফতার সিরাজগঞ্জে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উপকরণ বকনা বাছুর বিতরণ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত মাটি খননের সময়ে বেড়িয়ে আসা মাইন ও মর্টার সেল বিস্ফোরণ ঝিনাইদহে বৃষ্টির আশায় কেঁদে বুক ভাসালেন মুসল্লীরা বাংলাদেশ সমাজ সেবা ফাউন্ডেশন কর্তৃক তৃষ্ণা নিবারণ উপকরণ বিতরণ নাটোরে বাগাতিপাড়ায় আগুনে পুড়ে নিঃস্ব ৬ পরিবার শ্রীপুরে তালাবদ্ধ ঘর থেকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় জড়িত ২ জনকে গ্ৰেফতার করেছে র‌্যাব-১ রায়গঞ্জে শিক্ষা বিষয়ক গ্লোবাল এ্যাকশন সপ্তাহ পালিত ঝিনাইদহ র‌্যাবের অভিযানে মানব পাচার চক্রের মূলহোতা গ্রেফতার

কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নকশী কাঁথা

রানা ইস্কান্দার রহমান
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২
  • ১৬০ বার পঠিত

গাইবান্ধা জেলা ব্যুরো প্রধানঃ
শীতের আগমনীতে কাঁথা সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকেন গ্রামাঞ্চলের সাধারণ কিশোরী ও গৃহবধূরা। কিন্তু পুরাতন জীর্ণ বস্ত্রে প্রস্তুতকৃত রঙ-বেরঙ্গের সুতা দিয়ে সুনিপুন হাতে গড়া গ্রাম-বাংলার বধু-কন্যাদের মনের মাধুরী মেশানো অনুভুতিতে নান্দনিক রুপ-রস ও বর্ণ-বৈচিত্রে ভরা সেই কাঁথা,যার নাম নকশী কাঁথা। যা দেখে মুগ্ধ হয়ে পল্লীকবি জসীম উদ্দিন রচনা করেছেন তার অনবদ্য কাব্যগ্রন্থ ‘নকশী কাঁথার মাঠ’। শুধু তাই নয়, এ শিল্পের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিল আমাদের আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড। কিন্তু বর্তমান সময়ের আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে হাতের সেলাইয়ে গড়া এই নকশী কাঁথার ঐতিহ্য।
বড় বড় কারখানায় তৈরীকৃত দেশী-বিদেশী রঙ-বেরঙ্গেও রেডিমেট কাঁথা-কম্বলের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম-বাংলার এই দেশীয় শিল্পটি।
এক সময় দেখা যেত বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাটে-বাজারে ও শহরের পাড়া-মহল্লার ওলিতে-গলিতে নানী-দাদী, খালা-ফুফু ও বধু-কন্যাদের হাতে তৈরি নানা রকমের ফুল-ফল, পশু-পাখি, গাছ-পালা ও প্রকৃতির ডিজাইনে গড়া নকশী কাঁথা সাইকেলের পিছনে বেঁধে অথবা ভার বয়ে সারাদিন ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন সেই নকশী কাঁথা শীত মৌসুমের ব্যাবসায়ীরা।শুধু তাই নয়,
একটা সময় এই হস্তশীল্প দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছিল। বহিঃবিশ্বে তথা জাপান, আমেরিকা, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, নরওয়ে, জর্মানী, ইতালীসহ বিভিন্ন দেশে এই নকশী কাঁথার চাহিদা ছিল ব্যাপক। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আধুনিক যুগের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ভিড়ে রেডিমেটের জগতে হারিয়ে যেতে বসেছে সেসব ঐতিহ্য।
অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হিসেবে উৎপাদন, আয় বৃদ্ধি ও নতুন কর্ম-সংস্থান তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে এই খাতের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। এই খাতকে আরও বিকোশিত ও প্রগতিশীল করার লক্ষে সংশ্লিষ্ট কারু শিল্পীদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য সকল সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সমূহকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সময় ও পরিশ্রম বেশি হওয়ায় এবং মজুরি কম পাওয়ায় নকশী কাঁথা তৈরিতে গ্রামের নারীরাও বর্তমানে অনেকটাই বিমুখ হয়েছে। তবুও কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই নাটোর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে প্রায় ৩০/৪০ জনকে নকশী কাঁথা তৈরি করতে দেখা গেছে।
নকশী কাঁথা এক প্রকার শিল্প, এক সময় নকশি কাঁথা প্রায় ঘরে ঘরে তৈরি করা হতো। গ্রাম বাংলায় খাওয়ার পর ক্লান্ত দুপুরে ঘরের সব কাজ সেরে নারীরা ঘরের মেঝে, বারান্দা বা গাছের ছায়ায় মাদুর পেতে বসত নকশী কাঁথা নিয়ে। এক একটি নকশী কাঁথা তৈরি করতে কখনো কখনো প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়। সুঁইয়ের প্রতিটি ফোঁড়ে তৈরি করে এক একটি না বলা কথা।কতশত ইতিহাস আর গল্প।
নকশী কাঁথা সাধারণত দুই পাটের অথবা তিন পাটের হয়ে থাকে। চার-পাঁচ পাটের কাঁথা শীত নিবারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। তাতে কোনো কারুকার্য থাকে না। কিন্তু নকশী কাঁথায় বিভিন্ন নকশা থাকে। যেখানে লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি, হলুদ প্রভৃতি রঙের সুতো দিয়ে সুচের ফোঁড়ে নকশা করা হয়ে থাকে। অঞ্চলভেদে নকশার নাম করন হয়ে থাকে যেমন, নকশী কাঁথা, বাঁশপাতা ফোঁড়, বরকা ফোঁড়,কইতা,তেজবি ফোঁড় ও বিছা ফোঁড় ইত্যাদি নামে পরিচিত।

গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের সতিতলা গ্রামের
এক বয়স্ক মহিলা বলেন, এক সময় সাংসারিক কাজের পাশাপাশি নকশি কাঁথা তৈরি করেছি। এক একটি কাঁথা তৈরি করতে প্রায় তিন-চার মাস সময় লাগতো,তবে আকার ভেদে কাঁথা তৈরিতে সময় কমবেশি হয়। নকশী কাঁথার দাম জানতে চাইলে তিনি মুচকি হাসি দিয়ে বলেন,বিক্রি অথবা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয় বাড়িতে ব্যবহারের জন্য,এবং নাতি-লাতকুর,জামাই এদের উপহার দেওয়ার জন্যই এই কাঁথা তৈরি করতাম। কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই গ্রামের অনেক মেয়ে বউ ঝি ঐ সময় একত্রিত হয়ে মনের আনন্দে কাঁথায় নকশা ফুটিয়ে তুলেছি। এখনো অনেকে আসে আমার থেকে একটি নকশী কাঁথা তৈরি করে নিতে, সবাইকে তো আর না করতে পারনা তাই মাঝে মাঝে দুই একটি করে তৈরি করে দিই।
এবং নতুন কাপড় একত্রিত করে তার ওপর বিভিন্ন নকশার ছক আঁকায়ে বিভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে নকশা ফুটিয়ে সুজনি ফোঁড়,কাঁথা ফোড় ও বকুল ঝাড় কাঁথা তৈরি করছেন।
তার সাথে কথা হলে সে বলেন, কাঁথা শুধু বাড়ির জন্যই তৈরি করি তা নয়।আমি মজুরি হিসেবেও নকশী কাঁথা সেলাই করে দিই।তবে নকশী কাঁথা তৈরিতে যে পরিমাণ পরিশ্রম হয় সে তুলনায় আমরা মজুরি পাই না। ৪ বাই ৫ ফুট আকারের কাঁথা ১ হাজার ৫০০ টাকা, সাড়ে তিন বাই ৫ ফুট আকারের কাঁথায় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। তবে যে মজুরি পাওয়া যায় তা যথেষ্ট না। আর এ থেকে যে বাড়তি আয় হয় তা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংসারিক কাজে ব্যয় করা হয়।কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নকশী কাঁথা

গাইবান্ধা জেলা ব্যুরো প্রধান, রানা ইস্কান্দার রহমান

শীতের আগমনীতে কাঁথা সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকেন গ্রামাঞ্চলের সাধারণ কিশোরী ও গৃহবধূরা। কিন্তু পুরাতন জীর্ণ বস্ত্রে প্রস্তুতকৃত রঙ-বেরঙ্গের সুতা দিয়ে সুনিপুন হাতে গড়া গ্রাম-বাংলার বধু-কন্যাদের মনের মাধুরী মেশানো অনুভুতিতে নান্দনিক রুপ-রস ও বর্ণ-বৈচিত্রে ভরা সেই কাঁথা,যার নাম নকশী কাঁথা। যা দেখে মুগ্ধ হয়ে পল্লীকবি জসীম উদ্দিন রচনা করেছেন তার অনবদ্য কাব্যগ্রন্থ ‘নকশী কাঁথার মাঠ’। শুধু তাই নয়, এ শিল্পের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিল আমাদের আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড। কিন্তু বর্তমান সময়ের আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে হাতের সেলাইয়ে গড়া এই নকশী কাঁথার ঐতিহ্য।
বড় বড় কারখানায় তৈরীকৃত দেশী-বিদেশী রঙ-বেরঙ্গেও রেডিমেট কাঁথা-কম্বলের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম-বাংলার এই দেশীয় শিল্পটি।
এক সময় দেখা যেত বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাটে-বাজারে ও শহরের পাড়া-মহল্লার ওলিতে-গলিতে নানী-দাদী, খালা-ফুফু ও বধু-কন্যাদের হাতে তৈরি নানা রকমের ফুল-ফল, পশু-পাখি, গাছ-পালা ও প্রকৃতির ডিজাইনে গড়া নকশী কাঁথা সাইকেলের পিছনে বেঁধে অথবা ভার বয়ে সারাদিন ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন সেই নকশী কাঁথা শীত মৌসুমের ব্য

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর..
এই পত্রিকার সকল সংবাদ, ছবি ও ভিডিও স্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২১ দৈনিক মাতৃজগত    
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Bangla Webs
banglawebs999991