মোঃ আসাদুজ্জামান শাওন স্টাফ রিপোর্টার: ভারতীয় পণ্য বয়কোটের চলমান আন্দোলনে বিএনপির সংহতির বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি এখন বলব বিএনপি নেতারা যদি বাসায় গিয়ে বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ান সেদিন বিশ্বাস করব আপনারা সত্যি ভারতীয় শাড়ি বর্জন করলেন। ভারতীয় মসলা তারা খেতে পারবে কি না এ উত্তর তাদের দিতে হবে। আপনারা এ পণ্য সত্যি বর্জন করছেন কি না, এ কথাটাই আমরা জানতে চাই।
বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুরে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা না বলে পারলাম না। বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে পুড়ল। যে নেতারা বলছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন, তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে? আমি জানি, ঈদের আগে দেখি বিএনপির মন্ত্রীদের বউরা ভারত থেকে শাড়ি এনে বিক্রি করত।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে কিছু আঁতেল আছে। বুদ্ধিজীবী। বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন যিনি। বাংলাদেশে একটা কাণ্ড আমরা দেখি, অতি বাম, অতি ডান। স্বাভাবিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারাটা তারা পছন্দ করেন না।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আজকের যে দলটি বড় বড় কথা বলে, ২৫ শে মার্চ আওয়ামী লীগের সবাই পালিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করল, শুধু যুদ্ধ পরিচালনা নয়, সশস্ত্র বাহিনীর গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশকে ভাগ করা হয়। এক একটা সেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, “সেক্টর যিনি দায়িত্ব ছিলেন তিনি আহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান দায়িত্ব পায়, জিয়াউর রহমান একটা বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছ। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিল জিয়াউর রহমান। এই কথা নিশ্চয়ই তাদের ভুলে গেলে চলবে না। এটাও বললে চলবে না যে, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন মেজর।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ আমরা স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার করেছি। ৫৩ বছরের মধ্যে ২৯ টা বছর এই জাতির দুর্ভাগ্যের বছর। এই দেশটি পরাধীন। এদেশের মানুষ ছিল শোষিত বঞ্চিত। সেই জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ভুদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধ করে, স্বাধীনতার বিজয় এনে দেওয়া একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্বকারী জন্য সম্ভব। ১৫ আগস্ট এর জাতির পিতাকে হত্যা করার পর এ দেশে ইতিহাস বিকৃতির পালা দেখেছি।
“জিয়া রহমানের জন্ম হলো কলকাতায়। ভারত-পাকিস্তানের বিভক্ত হয়, তখন তারা কিন্তু পূর্ব বাংলা আসেনি, তারা করাচিতে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান সেখানে পড়াশোনা করে। সেখানেই আর্মিতে যোগ দেয়৷ সেখান থেকে কার্যাদেশ করে সামরিক অফিসার হিসাবে পূর্ব বাংলায় এসেছিল দায়িত্ব পালন করতে। এটাই হলো বাস্তবতা। কিন্তু তার মনে তো পাকিস্তানটাই রয়ে গেছে। তার প্রমাণও আছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল হল, এই প্রমোশনগুলা একে একে কে দিয়েছ? এটাও তো আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দিয়েছে। এই অকৃতজ্ঞরা সেটাও ভুলে যায়।”
সরকারপ্রধান বলেন, “ইতিহাস বিকৃত করে এখনো ভাঙ্গা রেকর্ড এর মতো ভুলে যাচ্ছে ওদের কখনো আক্কেল সেলামী হবে না। এখন তারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, তখন তারা কে কোথায় ছিল? যিনি বলে যান যে ২৫ মার্চ পালিয়ে গিয়েছিল? তার বাবা কে ছিল? স্বাধীনতা পর ৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষ হয়, তখন খাদ্য সচিব ছিল, এই খাদ্য সচিব বেইমানি করে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে দুর্ভিক্ষ ঘটিয়েছিল। জিয়াউর রহমান যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তখন পুরস্কার পেয়েছিল। তাকে মন্ত্রীর মর্যাদা উপদেষ্টা বানিয়েছি।
তিনি বলেন, “মঈনখানের বাবা তার নাম হলো মোমিন খান। সে ছিল খাদ্য সচিব। জাহাজ ফিরিয়ে দিয়ে খাবার আসতে দেয়নি বাংলাদেশে, দুর্ভিক্ষ ঘটন হয়েছিল। দুর্ভিক্ষ কিন্তু বাংলাদেশে ছিল। আমি ৮১ সালে দেশে আসি সারা বাংলাদেশ ঘুরি, তখন প্রতিবছর দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে পরিবর্তন তারা করতে পারেনি। কারণ তারা আমাদের বিজয় নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। যার কারণে জাতির পিতাকে হত্যা করলো। এরপর ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যা করলো, আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী তাদেরকে গ্রেপ্তার করা তাদের উপর নির্যাতন করা হয়। এরপরে দল গঠন । আজকে রাজনৈতিক দল করে অনেক বড় বড় কথা বলে।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এদেশে মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে। সেই দল ক্ষমতা থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় সেটা তো আজকে প্রমাণিত। ক্ষমতা দখলকারীরা অর্থাৎ টেলিভিশন ঘোষণা দিয়ে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম, এই হলাম পার্টিরা যখন ক্ষমতা ছিল, এদেশের মানুষের ভাগ্যে কি ছিল? ক্ষুধা, দারিদ্র, অশিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানী, সেশনজট, এইতো অবস্থাটা ছিল। আজকে যারা প্রশ্ন করেন আওয়ামী লীগ কোথায় ছিল ? আমি জিজ্ঞেস করি আপনারা কোথায় ছিলেন? সেটাও একটু বলেন। জবাব দিন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন এখানে (ঢাকায়) গণহত্যা শুরু করে, তারা কিন্তু চট্টগ্রামেও হত্যাকান্ড শুরু করেছিল। যারা জাতির পিতা আহবানে সারা দিয়ে বেরিকেট দিচ্ছিল, তাদের উপর গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিন। চট্টগ্রামের সেনাবাহিনীর দায়িত্বে জিয়াউর রহমান ছিল।
“সেই সময় যারা বেরিকেট দিয়েছে জিয়াউর রহমানোও তাদের উপর গুলি চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, স্যুয়াজ জাহাজ এসেছে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র নিয়ে সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। ২৫ শে মার্চ এ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যে আক্রমণ চালায় সেই আক্রমণকারী একজন কিন্তু জিয়াউর রহমান। সেটাও চট্টগ্রাম, এটাও বললে চলবে না।”
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান প্রমুখ।