গাইবান্ধা জেলা ব্যুরো প্রধান,রানা ইস্কান্দার রহমান:
গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে গাইবান্ধা ৫ আসনের স্থগিতকৃত উপনির্বাচনের বিষয়ে ইসির তদন্ত কমিটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ তদন্ত কার্যক্রমে আগামী তিন দিনের ৬ শত ৮৫ জনের বক্তব্য গ্রহন করবে ইসির তদন্ত কমিটি।
আজ ১৮ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল নয়টা থেকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রথম দিনের তদন্ত শুরু করেছেন। গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে এই তদন্তকাজ চলমান রয়েছে । আগামী তিন দিনব্যাপী এই তদন্ত কাজ চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এতে নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট অন্তত ৬৮৫ জনের বক্তব্য নেওয়া হবে।
প্রথম দিনে ১১ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৬৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট, ফুলছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বক্তব্য নেওয়া কথা রয়েছে। গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল মোত্তালিবকে পাঠানো তদন্ত কমিটির সদস্য মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, নির্বাচনের দিন প্রকৃত কী ঘটেছিল —এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি প্রশ্ন করছেন এবং বিস্তারিত শুনছেন।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে ১৩ অক্টোবর তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে ইসি। কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস ও শাহেদুন্নবী চৌধুরী। প্রধান নির্বাচন কশিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এই কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
১২ অক্টোবর সকাল আটটায় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোটের দিন দুপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোট পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চারজন প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। এরপর গোপন বুথে ঢুকে ভোট নেওয়াসহ নানা অনিয়ম সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখে নির্বাচন কমিশন একে একে ৫১টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন। এরপরে উপ নির্বাচন ভোট গ্রহনে নানা সমস্যায় সৃষ্টি হলে নির্বাচন কমিশনের বেলা দুইটার দিকে উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করে।
স্থগিত করা কেন্দ্র বাদে বাকি কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ঘোষণার দাবিতে ভোটের দিন বিকেল থেকে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। এ উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলটির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। অন্য চার প্রার্থী হলেন—জাতীয় পার্টির (জাপা) এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্পধারার এ্যাড.জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। ভোট গ্রহনে নানা অনিয়ম দৃশ্যমান হওয়ায় ও বহিরাগত লোকজন নানা কৌশলে নির্বাচনী এলাকায় ও ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করায় উপ নির্বাচনের ৪ জন ভোট বর্জন করেন।
উল্লেখ্য, গাইবান্ধা ৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার এ্যাড.ফজলে রাব্বী মিয়া গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য হওয়ায় গত ১২ অক্টোবর ভোট গ্রহনের দিন ঠিক করে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।