শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫০ অপরাহ্ন
ঘোষনা
উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধির ১৫ বছরে পদার্পণ: করেছেন এমপি শাওন উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধির ১৫ বছরে পদার্পণ: করলেন এমপি শাওন সরবরাহ থাকলেও কমছে না সবজির দাম সিরাজগঞ্জে আচারন বিধি ভঙ্গ করে নির্বাচনী প্রার্থীকে নিয়ে ভোট চাইছেন এক সরকারি কর্মচারী শিবগঞ্জে সানামসজিদ স্থলবন্দরে হিট স্ট্রোকে ট্রাফিক পরিদর্শকের মৃত্যু সিরাজগঞ্জ সলঙ্গায় গণধর্ষণ মামলার এজাহারনামীয় পলাতক প্রধান আসামি গ্রেফতার সিরাজগঞ্জে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উপকরণ বকনা বাছুর বিতরণ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত মাটি খননের সময়ে বেড়িয়ে আসা মাইন ও মর্টার সেল বিস্ফোরণ ঝিনাইদহে বৃষ্টির আশায় কেঁদে বুক ভাসালেন মুসল্লীরা

মিরপুর মুক্ত দিবসে, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন খান সেলিম রহমান

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১০৪ বার পঠিত

 

শেখ মোঃ হুমায়ুন কবির, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার:

৭১-এর ১৬’ই ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ৯০ হাজারের বেশি সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছিল বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের কাছে। তারপরও কিছু পরাজিত পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ না করে অবস্থান নিয়েছিল মিরপুরের অবাঙালী রাজাকার আলবদর অধ্যুষিত এলাকায়। দেড় মাস তারা তাদের এই অবস্থান ধরে রেখেছিল। ১৯৭২ সালের ৩০’শে জানুয়ারি, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী হানাদার মুক্ত করার জন্য মিরপুরে এক অভিযান চালায়। নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিখোঁজ সাহিত্যিক সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে মিরপুর এসে বরেণ্য চলচ্চিত্রনির্মাতা ও কথাশিল্পী জহির রায়হান এই অভিযানে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়েছেন। মিরপুর মুক্ত করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা লে. সেলিম ও পুলিশের ডিএসপি লোধীসহ সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা, যাঁদের জীবনের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের শেষ রণাঙ্গনে বিজয় ঘটে ১৯৭২ এর ৩১’শে জানুয়ারি। মিরপুরের যুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর ৩১’শে জানুয়ারি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মিরপুর মুক্ত দিবস পালন করে।

মিরপুরের যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
জাতীয় দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকা’র সম্পাদক, বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাব (কেন্দ্রীয় কমিটি’র) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, খান সেলিম রহমান। মিরপুরের যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন।

সেভেন স্টার বাহিনী ও অন্য বিহারিরা যুদ্ধের সময় বাঙালিদের হত্যা করে এই ডোবা ও কোওয়ার মধ্যে ছুড়ে ফেলেছে যুদ্ধের নয় মাস। ১৯৭২ সালের ৩০’শে জানুয়ারি, পর্যন্ত এই সেভেন স্টার বাহিনী মিরপুরে গণহত্যাসহ নানাবিধ অপরাধমূলক তৎপরতায় লিপ্ত ছিল। মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে তেইশটি বধ্যভূমি শনাক্ত করা গেছে।

এগুলো হলো ১/জল্লাদখানা, ২/মুসলিম বাজার, ৩/মিরপুর ১২ নম্বর সেকশন পানির ট্যাঙ্ক, ৪/মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন ওয়াপদা বিল্ডিং, ৫/মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশন, ৬/মিরপুর ১০/সি লাইন ১৪ নম্বর সেকশন, ৭/মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশন, ৮/মিরপুর ১৪ নম্বর কবরস্থান, ৯/সিরামিক ফ্যাক্টরি, ১০/শিয়ালবাড়ি, ১১/হরিরামপুর, ১২./মিরপুর ব্রিজ, ১৩/নম্বর সেকশনের কালাপানির ঢাল, ১৪/রাইনখোলা বধ্যভূমি, ১৫/মিরপুরের দারুল রশিদ মাদ্রাসা, ১৬/মিরপুরের বায়তুল আজমত জামে মসজিদ, ১৭/আলোকদি, ১৮/বাংলা কলেজ, ১৯/বাংলা কলেজের কাছে আমবাগান, ২০/নম্বর সেকশনের সারেংবাড়ি, ২১/চিড়িয়াখানার কাছে সিন্নিরটেক, ২২/গোলারটেক, ২৩/কল্যাণপুর বাসডিপো। ১৯৭১ সালে শিয়ালবাড়ি ছিল কৃষি-অধ্যুষিত গ্রামাঞ্চল। এখন এটি পরিণত হয়েছে রূপনগর আবাসিক এলাকায়। ১৯৯২ সালে স্থানীয় লোকদের উঠিয়ে দিয়ে প্লট বরাদ্দ করা হয়। বধ্যভূমির জন্য নির্ধারিত হয় মাত্র ছয় কাঠা জায়গা। ঢাকার উপকন্ঠে এটা ছিল বড় বধ্যভূমি।

খান সেলিম রহমান আরো বলেন, মিরপুরের ১০ নং সেকশনে ‘জল্লাদখানা’ বাংলাদেশের বড় বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭১ সালে পুরো মিরপুর এলাকার বড় অংশই ছিল গ্রামীণ জনপদ। জল্লাদখানার আশেপাশের এলাকাসহ সমগ্র মিরপুরই ছিল বিহারি-অধ্যুষিত। ’৭১-এর যুদ্ধে, পাকিস্তানি আর্মি নির্বিচারে বাঙালি হত্যার জন্য এই বিহারিদের হাতে প্রচুর অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। ওই সময় পাকিস্তানি আর্মি ও বিহারিরা হাজার হাজার বাঙালিকে ধরে এনে এখানে হত্যা করত। এ কারণেই সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি পাওয়া গেছে মিরপুরের মাটিতে।

১৯৭১-এর জল্লাদখানায় একটি পাম্প হাউজ তৈরি করা হয়েছিল। এই হাউজের ভেতরেই, নিরীহ নিরাপরাধ বাঙালিদের বিহারিরা নানাভাবে হত্যা করত এই ঘরের নিচেই ছিল স্যুয়ারেজ লাইনের দু’টি গভীর সেফটি ট্যাঙ্কি। জবাই বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় হত্যা করে বাঙালিদের লাশ ওই ট্যাঙ্কি দু’টোতে ফেলে দেয়া হতো। কেবল যুদ্ধের সময়েই নয়, স্বাধীনতার পরও এখানে বাঙালিদের হত্যা করা হতো।

১৯৭২ সালের এই দিনে ঢাকার মিরপুর মুক্ত করতে গিয়ে লেফটেন্যান্ট সেলিম সামরিক বাহিনীর ৪১ সদস্য, শতাধিক পুলিশ ও মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে জীবন উৎসর্গ করেন। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হওয়ার পরও দেশের অনেক স্থান হানাদার দখলদারমুক্ত হয়নি। তার মধ্যে মিরপুরও ছিল। জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে অবরুদ্ধ মিরপুর মুক্ত করার অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব লেফটেন্যান্ট সেলিমের ওপর বর্তায়। জেনারেল মঈনুল হোসেনের ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষী’ গ্রন্থে। সেলিমকে তার নিজ সেনা বি-কোম্পানি থেকে বিচ্ছিন্ন করে হঠাৎ বেলা ১১:টায় মিরপুরে যুদ্ধের মাঝখানে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দিয়ে নিজে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেন তৎকালীন মেজর মঈন। আর একপর্যায় হেলাল মোর্শেদও আহত সেলিমকে যুদ্ধের মাঝে রেখে নিরাপদ স্থানে সরে পড়েন।

৩০’শে জানুয়ারি বেলা ১১টায় ঘটনাস্থলে সেলিম পৌঁছানোমাত্র গোলাগুলি শুরু হয়। ১২ নম্বর পানির ট্যাংকের পেছন থেকে প্রথম গুলি ধেয়ে আসে। রাস্তার অন্য পাশে কাঁঠাল গাছের ফাঁক দিয়ে একটি গুলি এসে সেলিমের ডান বুকে বিদ্ধ হয়। গুলিটি কোন দিক দিয়ে এসেছে বোঝা যায়নি। আঘাতের আকস্মিকতায় লেফটেন্যান্ট সেলিম প্রথমে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে এলে উঠে শার্ট দিয়ে বুক বেঁধে ফেলেন। উপস্থিত সেনাদের আশ্বস্ত করতে বললেন, ‘আমি বেঁচে থাকতে তোমাদের ছেড়ে যাচ্ছি না।’ ক্লান্ত শরীরটা একটি গাছের আড়ালে রেখে তিনি একের পর এক গুলি চালিয়ে গেছেন শত্রুদের দিকে। কভার ফায়ার দিয়ে সহযোদ্ধাদের সরে যেতে সাহায্য করছিলেন। তার ধারণা ছিল সহযোগিতা দ্রুতই এসে পৌঁছাবে। কেউ তাকে উদ্ধার করতে যায়নি। একসময় আকাশের ফ্যাকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বীরনক্ষত্র সেলিম পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নেন।

খান সেলিম রহমান আরো বলেন, ১৯৭২ সালের ৩০’শে জানুয়ারি মিরপুর মুক্তকরণ যুদ্ধ সংগঠিত হয় ও পরদিন ৩১’শে জানুয়ারি সকালে রাজধানীর ঢাকার মিরপুর এলাকা মুক্ত হয়। মিরপুরের যুদ্ধে জিয়াউল হক লোদী, লে. সেলিমসহ ৪১ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য, শতাধিক পুলিশ এবং মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আজকের এই দিনে, মিরপুরের যুদ্ধে সকল শহীদদের প্রতি জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর..
এই পত্রিকার সকল সংবাদ, ছবি ও ভিডিও স্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২১ দৈনিক মাতৃজগত    
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Bangla Webs
banglawebs999991