বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১০:৪৬ অপরাহ্ন

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পাচার পথে গায়েব হওয়া আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ২৫ প্যাকেট হেরোইন উদ্ধারে রাতভর অভিযান চালিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩
  • ৯২ বার পঠিত

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পাচার পথে গায়েব হওয়া আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ২৫ প্যাকেট হেরোইন উদ্ধারে রাতভর অভিযান চালিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে শেষ পর্যন্ত ডিবির দলটি রোববার ভোরের দিকে ঘটনাস্থল থেকে খালি হাতে ফিরেছেন। উপজেলার পিরিজপুর বাগানপাড়া এলাকার কয়েকটি বাড়ি ও এলাকায় অভিযান চালালেও হেরোইন উদ্ধার কিংবা চুরির সঙ্গে জড়িত কাউকে তারা গ্রেফতার করতে পারেননি। উল্লেখ্য, ভারত থেকে সীমান্ত পথে হেরোইন পাচারের প্রধান রুট গোদাগাড়ী সীমান্ত। একাধিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হেরোইন পাচারের সময় মাঝপথে ছিনতাই, চুরি কিংবা গায়েব এবং আসল মাদক বদল করে নকল মাদক দেওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলে জানা গেছে। এলাকাবাসী ও পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, ১৫ মার্চ রাতে ভারত থেকে হেরোইনের একটি বড় চালান গোদাগাড়ীতে আসার খবর পেয়ে জেলা ডিবির একাধিক দল অভিযানে নামেন পদ্মা নদীর দুই পারে। একটি দল পদ্মার পশ্চিমপাড়ে দিয়াড়মানিকচক এলাকায় অবস্থান নেয়। আরেকটি দল অবস্থান নেয় রেলবাজার এলাকায় নদীর ভেতরে। বিভিন্ন উপায়ে ডিবির অবস্থানের বিষয়টি হেরোইনের মালিক মাদারপুরের তারেক সিন্ডিকেট আগেই জেনে যায়। এরপরেই সিন্ডিকেট পথ বদলের নির্দেশ দেয় বহনকারীদের। সীমান্ত পয়েন্ট থেকে ২৫ প্যাকেট হেরোইন তারেক সিন্ডিকেটের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতুলি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কোদালকাঠির জেলেপাড়ার বাদেকুল ইসলাম ছেলে সামাদ ও পাঝরাপাড়ার মৃত বেলালের ছেলে তারেকের। হেরোইনের চালানটি মালিকের কাছে পৌঁছানোর বিনিময়ে তারা নির্দিষ্ট হারে কমিশন পেতেন। রেলবাজার এলাকায় ডিবির টিমের অবস্থান জানতে পেরে বহনকারী সামাদ-তারেক চক্র রেলবাজারের এক কিলোমিটার ভাটিতে মাওলানার গেট এলাকা দিয়ে হেরোইনের চালান নদী থেকে গ্রামের মধ্যে উঠায়। এদিকে পথে হেরোইনের চালান ধরতে না পেরে ডিবির দলগুলো রেলবাজার, মাদারপুর ও ডিমভাঙ্গার কয়েকজন মাদককারবারির বাড়িতে নজরদারি শুরু করে। কিন্তু তাদের চোখকে ফঁািক দিয়ে পাচারকারী চক্র হেরোইনের চালান নিয়ে যায় পিরিজপুর বাগানপাড়ার তাহাজুলের ছেলে হানিফের বাড়িতে। ডিবির টিম হেরোইন আটক কিংবা জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে না পেরে ওইদিন রাজশাহীতে ফিরে যায়। এলাকাবাসী আরও জানান, পরদিন ১৬ মার্চ হেরোইনের মালিক তারেক সিন্ডিকেটের একটি দল পিরিজপুরে হানিফের বাড়িতে যায় মাদকগুলো নিয়ে আসতে। এ সময় হানিফ তাদের জানান, তার ঘর থেকে হেরোইনের প্যাকেটগুলো রাতে চুরি হয়ে গেছে। হেরোইনের মালিকসহ সিন্ডিকেটের লোকেরা সারা দিন দেনদরবার করেও হানিফের কাছ থেকে হেরোইন উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। ফলে ১৬ মার্চ রাত আনুমানিক ৯টার দিকে হেরোইন চক্রের আরেক দোসর পিরিজপুরের ইমন নামের এক যুবকের সহায়তায় হানিফকে তুলে নিয়ে যায় তারেক সিন্ডিকেটের লোকেরা। ইমন হানিফের প্রতিবেশী ও মাদক পাচার চক্রের অন্যতম সদস্য বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। হানিফকে নিয়ে গিয়ে মাদারপুরের একটি অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখে তারেক সিন্ডিকেট ব্যাপক নির্যাতন চালায়। হানিফের আত্মীয়স্বজনরা তাকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে প্রতিবেশী ইমনের বাড়িতে হামলা চালায়। গভীর রাতে হানিফ ও ইমন পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে গেলে প্রেমতলী পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। এলাকাবাসীর মতে, পুলিশের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত তারেক সিন্ডিকেট হানিফকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এদিকে ছাড়া পেয়ে ওই রাতেই হানিফ, ইমন ও মোমিন নামের এলাকার আরেক যুবক গা ঢাকা দেন। তাদের এখন খুঁজছে মাদক সিন্ডিকেট ও পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, তারেক সিন্ডিকেট হেরোইন উদ্ধারে ব্যর্থ হলে ডিবি পুলিশের কাছে খবরটি যায়। ১৮ মার্চ শনিবার রাতে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি দল হেরোইন পাচারকারীদের গ্রেফতার ও চুরি যাওয়া হেরোইন উদ্ধারে হানিফ, ইমন ও মোমিনের বাড়িসহ এলাকায় রাতভর অভিযান চালায়। একই সঙ্গে র‌্যাবের একটি দল পদ্মার চরাঞ্চলের জেলেপাড়ায় সামাদ ও পাঝরাপাড়ায় তারেককে ধরতে অভিযান চালায়। তবে পাচার চক্রের কাউকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। ডিবির দলগুলো হানিফ, ইমন ও মোমিনের পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে এসেছে, আগামী দুদিনের মধ্যে যেন চুরি হওয়া মাদক পুলিশের কাছে জমা করে। নাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, হেরোইন পাচার চক্রের সদস্যসহ বিপুল পরিমাণ হেরোইন গায়েবের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে পুলিশ অধিকতর তথ্য সংগ্রহ করছে। তবে রাত ভর অভিযান চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। অন্যদিকে রোববার ঘটনার বিষয়ে জানতে এলাকায় সরেজমিন গেলে হানিফ, ইমন ও মোমিনের পরিবারের সদস্যরা জানায়, শনিবার রাতে ডিবি পুলিশ এসেছিল তাদের খোঁজে। তিন দিন ধরে তারা বাড়িতে ফেরেনি। সেই সঙ্গে চরাঞ্চলের সামাদ ও তারেকও এলাকা থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আলতুলি ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাসিন্দা। এ ছাড়া হেরোইনের মালিক মাদারপুরের তারেক সিন্ডিকেটের সদস্যরাও এলাকার বাইরে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন ডিমভাঙ্গা এলাকার লোকজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর..
এই পত্রিকার সকল সংবাদ, ছবি ও ভিডিও স্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২১ দৈনিক মাতৃজগত    
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Bangla Webs
banglawebs999991