রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন

দেশজুড়ে প্রচন্ড শীতের দাপট, গরম কাপড়ের দোকানে ভিড়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১১৩ বার পঠিত

আওরঙ্গজেব কামাল : শীতের তীব্রতা ছড়িয়েছে সারা দেশে। মাঘ মাস শুরু হওয়ার আগেই ঢাকাসহ তার পাশ্ববর্তী এলাকায় জেঁকে বসেছে শীত। সারাদিন ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে । ঢাকা মহানগরী ও জেলার বেশীরভাগ এলাকা। সেই সঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে মৃদু বাতাস। যতই সময় বাড়ছে শীতের তীব্রতাও বাড়ছে। এমন অবস্থায় শীত নিবারণে ঢাকাবাসীর চাহিদা বেড়েছে গরম কাপড়ের। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফুটপাত, বিপণী বিতান ও শপিং মলে বেচাকেনা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শীতের কাপড়। শনিবার বিকালে ঢাকা নগরীর ফার্মগেট,মতিঝিল, আব্দুল্লাহপুর,মিরপুর,গাবতলী,সাইদাবাদ,যাত্রাবাড়ীসহ জেলার সাভার,আমিনবাজার,আশুলিয়া এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা নগরীর অধিকাংশ ফুটপাথ যেন শীতের কাপড় কিনতে ব্যাসা্ত রয়েছে নগরবাসী। ঢাকার একাধিক এলাকায় ফুটপাতে দেখা গেছে, গরম কাপড় কিনতে ভিড় করছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। সদরঘাট, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, মিরপুর এলাকার ফুটপাত ঘুরে জানা গেছে, বড় বড় মার্কেট ও শপিংমলে শীতের কাপড়ের দাম বেশি থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্তরা শীতের কাপড় কিনতে ভিড় করেন ফুটপাতের দোকানগুলোতে। ফুটপাতে গরম কাপড় কিনতে আসা সাইফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা জানান, এখন দেশের যে অবস্থা, জিনিসপত্রের দাম হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আগে দেখা গেছে, যাদের একটু উপার্জন কম ছিল, তারা ফুটপাতের দোকানগুলোতে এসে পছন্দের কেনাকাটা করতেন। বর্তমানে শুধু নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরাই নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও ফুটপাতের দোকানগুলোয় ভিড় জমাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহ থেকে হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়ার কারণে তারা বিপাকে পড়েছেন। তাই নগরীর অভিজাত মার্কেট থেকে শুরু করে ফুটপাত সব জায়গায় বেড়েছে শীতের কাপড়ের কদর। আর অলিগলিতে ভ্যানে করে গরম কাপড় বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়ে। ব্যবসায়ীরা জানান, ফুটপাতে ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকমের গরম পোশাক। যার মধ্যে শিশুদের জিন্সের ফ্রক, স্কাট, উলের পোশাক, বেবি কিপার, রেকসিনের জ্যাকেট। ছেলেদেরও পোশাকের মধ্যে হুডি, ফুল হাতা টি-শার্ট, শীতের টুপি, জ্যাকেট ব্লেজার। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে এসেছে বিভিন্ন ধরনের কম্বল। ব্যবসায়ীরা জানান, শীতের অধিকাংশ ক্রেতাই তরুণ-তরুণী। সেজন্য তাদের পছন্দের কথা চিন্তা করে দোকানে ক্যাজুয়াল ফ্যাশনের কালেকশনই বেশি রাখা হয়েছে। এরমধ্যে এবার জ্যাকেটের চাহিদা বেড়েছে। এরমধ্যে জেন্টস লেদার জ্যাকেট, জেন্টস ফুল স্লিভ জ্যাকেট, লেডিস ফিট ফুল স্লিভ জ্যাকেট, জেনস কটন জ্যাকেট, ফুল স্লিভ জেন্টস ক্যাজুয়াল জ্যাকেট, জেন্টস হুডি জ্যাকেট অন্যতম। নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের কথা মাথায় রেখে এসব জ্যাকেটের প্যাটার্নেও এখন আনা হয়েছে বেশ নতুনত্ব। সিনথেটিক এবং মিক্সড লেদারের জ্যাকেটও রয়েছে দোকানগুলোতে। এছাড়াও ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন প্যাটার্ন স্টাইল এবং গুণগত মানের কাপড় দেখা গেছে দোকানগুলোতে। এদিকে আশুলিয়া ঘুরে দেখা যায় শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে চরম বিপাকে,তারা কম দামের গরম কাপড় খুঁজতে ফুটপথের দোকানে ভীড় করছে। এবিষয়ে শরিফুল নামের এক ক্রেতা বলেন এখন বেশী শীত আসায় গরম কাপড়ের দাম বেড়েছে। যেটা আমাদের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভাব নয়। সরেজমিনে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, আশুলিয়ার শ্রীপুর, জিরানী বাজার, বলিভদ্র বাজার, বাইপাইল, পল্লীবিদ্যুৎ ও জাগড়া এলাকার ফুটপাতগুলোতে প্রচুর পরিমাণে রং বেরংয়ের শীতের কাপড় দিয়ে পসরা সাজিয়েছেন দোকানীরা। স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে শুরু তরে সব শ্রেণির মানুষজন ঝুঁকছেন শীতের পোশাক কিনতে। মিলছে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী নারী পুরুষের শীতের রকমারি পোশাক।ফুটপাতে দোকান বসানোর ফলে একদিকে যেমন স্বল্প আয়ের মানুষের উপকার হচ্ছে অন্যদিকে মহাসড়কের পাশের এ দোকানগুলোর কারণে সড়কে যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। আবার ঝুঁকিও রয়েছে। যেকোন সময় ঘটতে পারে দূর্ঘটনা। হতে পারে প্রাণহানির মত ঘটনা।আশুলিয়ার বলিভদ্র বাজার ফুটপাতে পোশাক কিনতে এসেছেন নিশ্চিন্তপুরের আব্দুল করিম। তিনি শীতের জন্য গরম কাপড় কিনতে এসেছেন। তিনি জানান, এখানে অল্প দামে ভালো ভালো পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। তিনি বলেন এখানে দাম একটু কম। এখানে যে টার মুল্য ৫শ টাকা সেই একই জিনিস শপিংমলের কোন বড় দোকান থেকে কিনতে গেলে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। ফলে আমরা এখানে এসেছি।আশুলিয়ার অন্যান্য ফুটপাতের দোকানগুরো ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফুটপাতের দোকানগুলোতে শীতের গরম কাপড়গুলো এখন অনেক চড়া দামে বিক্রয় হচ্ছে। সেই সাথে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর জন্য ফুটপাতের কাপড় কিনতে যেন হীমসীম খাচ্ছেন ।ঘুরে দেখা যায় আশুলিয়ার শ্রীপুর, বলিভদ্র বাজার, জিরানী বাজার, জমগড়া ও বগাবাড়ি বাজারে মহাসড়কের পাশের ফুটপাতে শীতের পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে। শীতের পোশাক বিক্রি করা একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শিশু ও বয়স্কদের শীতের কাপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে। শীতের কাপড়ের মধ্যে পায়ের মোজা, হাত মোজা, মাফলার, সুয়েটার, হুডি, মাথার টুপি, ফুলহাতা গরম কাপড়ের গেঞ্জি বিক্রি হচ্ছে বেশি। বিক্রেতারা দাম সহনীয় রয়েছে বললেও ক্রেতারা বলছেন দাম একটু বেশি।তারা বলছেন, শীতের শুরুতে কেনা পোশাক এখন কাজে লাগছে না। তীব্র শীতে তাই তারা এখানে এসেছেন শীতের কাপড় কিনতে। তবে বিভিন্ন শপিং মলের থেকে ফুটপাতে কাপড়ের দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তাই এখানেই ছুটে এসেছেন। তবে ক্রেতাদের এই সময়ে গরম কাপড়ের চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রেতারা দাম হাঁকাচ্ছেন কয়েকগুণ বেশি। শ্রীপুর ফুটপাতে শীতের কাপড় বিক্রি করেন কামরুল। তিনি জানান, শীত বাড়ার সাথে সাথে বাচ্চাদের গরম কাপড় বিক্রি বেড়ে গেছে। সেই সাথে বয়স্কদের জন্য কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। তার প্রতিদিন ৪/৫ হাজার টাকার মতো কাপড় বিক্রি হয়ে থাকে। শীতের জামা কিনতে আসা ইমামুল জানান, তিনি শীতের শুরুতে কয়েকটা পাতলা জামা কিনেছিলেন। কিন্তু শীতের তীব্রতার কারণে সেগুলো কাজে আসছে না। দোকানগুলোতে প্রচুর ভিড় থাকায় বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। এটা নিয়ন্ত্রেনের প্রয়োজন । আমমাদের আয় কম তাই ফুট পথে এসেসি তবুও অনেক দামের কারনে কিছুই ক্রয় করতে পারেনি। এদিকে সাভারের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতগুলো ঘুরে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভিড়।কেউ ভ্যানের উপর আবার কেউ ফুটপাতে রেখেই করছেন বেচা-বিক্রি। এসব দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। খুঁজছেন নিজের পছন্দের পোশাকটি। সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষ বেশি ভিড় করছেন এসব দোকানে। তবে স্বল্প আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যম আয়ের মানুষেরা আসছেন এখানে কেনাকাটা করতে। সাভার বাস স্টান্ড এলাকায় সর্বত্রই দেখা যায়, ফুটপাতের দোকানিরা কয়েকজন কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে ১শ টাকা, ৫০ টাকা বলে ডাক হাঁকছে। আবার কেউ অডিও সাউন্ড বাজিয়ে ১০০ টাকা, ১০০ টাকা বলে ডাকছে। এভাবে ডাকাডাকি শব্দে মুখরিত হচ্ছে সাভারের ফুটপাতগুলো।সাভার নিউজ মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সেখানেও গরম পোশাক বিক্রি হচ্ছে রাস্তার ওপর ফুটপাতে। এদিকে সাভার ও আশুলিয়ার কয়েক শতাধিক ছোট-বড় কারখানা থাকায় শীত শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই কাপড় তৈরিতে ব্যাস্ততা বেড়ে যায়। মূলত এই মৌসুমে এসব কারখানায় জ্যাকেট, ট্রাউজার, টুপি ও স্যোয়েটারসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি হয়ে থাকে।কারখানার শ্রমিকরা জানায়, শীত আসলেই কাজের চাপ বেড়ে যায়। তাই তাদের নির্দিষ্ট সময়ের পরেও অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। ফলে শীত মৌসুমে তাদের পারিশ্রমিকও ওঠে দ্বিগুণ। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধিসহ দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি থাকতে পারে বলেও জানানো হয়েছে আবহাওয়া অফিস থেকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর..
এই পত্রিকার সকল সংবাদ, ছবি ও ভিডিও স্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২১ দৈনিক মাতৃজগত    
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Bangla Webs
banglawebs999991